ঈদুল ফিতরের দিনের আমল

Share on:
ঈদুল ফিতরের দিনের আমল

দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর আল্লাহর পক্ষ থেকে ঈদুল ফিতর আমাদের জন্য একটি বিশেষ আনন্দের দিন। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি পুরষ্কার, যা আমাদেরকে তার আনুগত্য করার জন্য প্রদান করা হয়েছে। এই আনন্দের মাধ্যমে আমাদের বিগত জীবনের পাপ থেকে মুক্তি লাভের প্রত্যাশা করা উচিত। ঈদের দিন আনন্দিত ও হাসিখুশি থাকা একটি সুন্নাহ। এদিন আনন্দ-উৎসব পালন করা এবং অন্যকেও আনন্দিত করা ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। আসুন সংক্ষেপে ঈদের দিনের কিছু সুন্নাহ সম্পর্কে জেনে নেই, যা আমাদের এই দিনকে ইবাদতে পরিণত করতে সাহায্য করবে।

ঈদুল ফিতরের দিনের কিছু আমল

  • তাকবীরে তাশরীক
  • ঈদের সালাতের আগেই ফিতরা আদায়
  • খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা ও আগে আগে ঈদগাহে যাওয়া
  • মিসওয়াক করা, গোসল করা ও সুগন্ধি লাগানো
  • বেজোড় সংখ্যক খেজুর বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া
  • যানবাহন ব্যবহার না করে পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া
  • ঈদগাহে যাওয়া ও আসার পথ ভিন্ন করা
  • উন্মুক্ত স্থানে ঈদের সালাত আদায় করা
  • খুতবা শোনা (ওয়াজিব)
  • ঈদের দিন যথা সম্ভব হাসি খুশি থাকা
  • একে অন্যকে ঈদের অভিভাদন জানানো

তাকবীরে তাশরীক

ঈদের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর সন্ধ্যা থেকে পর দিন ঈদের সালাতের আগ পর্যন্ত তাকবীর দেয়া মুস্তাহাব। শাওয়াল মাস শুরু হয় রমাদানের শেষ ইফতারের মাধ্যমে। তখন থেকে বেশি বেশি তাকবীর দিব। ঈদগাহে ঈদের সালাত আদায় করতে যাওয়ার সময়ও পুরুষেরা উচ্চ স্বরে তাকবীর দিতে দিতে যাবে। ঈদগাহে ইমাম সাহেব উপস্থিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকবীর পড়তে থাকব। তাকবীরে তাশরীক হলোঃ

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَاَللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْد

অর্থঃ আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

ঈদের সালাতের আগেই ফিতরা আদায়

ঈদের সালাতের আগেই সাদাকাতুল ফিতর আদায় করে দিতে হয়। যেন দরিদ্র লোকেরা ঈদের দিন অন্যের কাছে হাত না পাতে। তাদের কথা ভেবে ঈদের দিনের ২-৩ দিন আগেই সাদাকাতুল ফিতর আদায় করে দেয়া উত্তম। যেন তারা এর উত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারেন। যেন তারা ২-১ আগে থেকেই ঈদের দিনের ব্যাপারে প্রস্তুতি নিতে পারেন। ঈদের ২-১ দিন আগে ফিতরা দেয়া সাহাবীদের আমল দ্বারা প্রমাণিত। তাই ঈদের সালাতের আগেই ফিতরা দেয়ার অর্থ এই নয় যে সালাতের আগ মুহূর্তে দিতে হবে। বরং এটি শেষ সীমা। হানাফী ফিকহ অনুসারে ঈদের সালাতের পর ফিতরা আদায় করলে আদায় হয়ে যাবে কিন্তু তা অনুচিত। অন্যান্য মাজহাবের ইমামদের মত এরকমও পাওয়া যায় যে, ঈদের সালাতের পর ফিতরা দিলে ফিতরা আদায়ই হবে না। বরং তা সাধারণ দান হিসাবে গণ্য হবে। অনেকেই আছেন ঈদের সালাতের পর ঈদগাহে আগত সাহায্যপ্রার্থীদেরকে ফিতরার টাকা থেকে ৫-১০ টাকা করে বিলি করেন। এটা করা উচিত নয়। এ সময় সাধারন সাদাকা বা দান করব। কিন্তু ফিতরার টাকা বা খাদ্যদ্রব্য ঈদের ২-১ দিন আগেই পৌঁছে দিব।

খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা ও আগে আগে ঈদগাহে যাওয়া

ঈদের দিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে ঈদগাহে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হওয়া এবং আগে আগে ঈদগাহে উপস্থিত হওয়া সুন্নাহ।

মিসওয়াক করা, গোসল করা ও সুগন্ধি লাগানো

ঈদের দিন মিসওয়াক করা, গোসল করা ও সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নাহ। যদি ঈদগাহে নারীদের যাওয়ার সুযোগ থাকে সেক্ষেত্রে নারীরা কোনো অবস্থাতেই সুগন্ধি লাগিয়ে ঈদগাহে যাবে না। কারণ সকল অবস্থাতেই নারীদের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করে বাহিরে বের হওয়া নবীজির (সা) সরাসরি নিষেধ।

বেজোড় সংখ্যক খেজুর বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া

ঈদগাহে যাওয়ার আগে নবীজি (সা) বেজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন। তাই আমরাও ঈদগাহে যাওয়ার আগে খেজুর বা মিষ্টি জাতীয় কোনো খাবার খেয়ে ঈদগাহের দিকে রওনা হব ইনশাআল্লাহ।

যানবাহন ব্যবহার না করে পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া

যানবাহন ব্যবহার না করে পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নাহ। তবে অসুস্থ্যতা বা অন্য কোনো সমস্যা থাকলে সেটা ভিন্ন বিষয়।

ঈদগাহে যাওয়া ও আসার পথ ভিন্ন করা

ঈদগাহে যে পথ দিয়ে যাওয়া হবে, বাড়িতে ফেরত আসার সময় ভিন্ন পথে আসা সুন্নাহ। যদি বিকল্প রাস্তা না থাকে তাহলে যাওয়ার সময় রাস্তার যে পাশ দিয়ে যাব, ফেরার পথে তার বিপরীত পাশ দিয়ে ফিরব। তাহলেও ইনশাআল্লাহ এই সুন্নাহ আদায় হবে। যাওয়া আসার ভিন্ন এই পথে যত মানুষের সাথে দেখা হবে চেষ্টা করব ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় বা অন্তত সালাম বিনিময় করার। যত দরিদ্রদের সাথে দেখা হবে সাধ্য মত সকলকে সাদাকা করার চেষ্টা করব।

উন্মুক্ত স্থানে ঈদের সালাত আদায় করা

আবদ্ধ স্থানে বা মসজিদের ভিতরে ঈদের সালাত আদায় না করে উন্মুক্ত স্থানে ঈদের সালাত আদায় করা সুন্নাহ। কিন্তু যদি সেরকম সুযোগ না থাকে তাহলে মসজিদেও আদায় করা যাবে।

খুতবা শোনা

জুমআর সালাতের খুতবা হয় সালাতের আগে আর ঈদের সালাতের খুতবা হয় সালাতের পরে। মুসল্লিদের জন্য চুপ থেকে খুতবা শোনা ওয়াজিব। প্রায়শ দেখা যায় খুতবা চলাকালীন সময়ে পারস্পরিক কথাবার্তা বলা, উঠে চলে যাওয়া অথবা মসজিদের জন্য টাকা কালেকশন করা হয়। এগুলো খুবই গর্হিত ও অন্যায় কাজ।

ঈদের দিন যথা সম্ভব হাসি খুশি থাকা

ঈদ আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য প্রদত্ত খুশির একটি দিন। তাই এদিন হাসিমুখে থাকা ও আনন্দিত থাকাও একটা ইবাদত। আমাদের মধ্যে অনেকেই অনেক কষ্ট ও দুর্দশার মধ্যে আছেন। তাও চেষ্টা করব এই দিনটি আনন্দিত ও হাসিখুশি থাকার জন্য। আল্লাহ আমাদের সকলের দুনিয়া ও আখিরাতকে সুখ-শান্তি ও আনন্দময় করুন। আমীন।

একে অন্যকে ঈদের অভিভাদন জানানো

দেখা হলে বা কারো সাথে ফোনে/মেসেজে কথা হলে আমরা পরস্পরকে অভিভাদন জানাব। সাহাবীগণ (রা) ঈদের দিন দেখা হলে পরস্পরকে সুন্দর একটি দুআ করার মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। তা হচ্ছেঃ

تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنكُم

অর্থঃ আল্লাহ আমাদের পক্ষ থেকে এবং আপনার পক্ষ থেকে (নেক আমলগুলো) কবুল করে নিন।

এই বাক্যটি পড়লে একটা সুন্দর দুয়া করা হলো এবং সাহাবীদের (রা) একটা সুন্নাহের উপর আমল হল। এটা না বলে প্রচলিত ঈদ মুবারক বলাও জায়েজ আছে। এর অর্থ বা উদ্দেশ্য হচ্ছে “তোমার ঈদ মুবারক বা বরকতময় হোক”। তাই ঈদ মুবারক বললেও এতে কোনো অসুবিধা নাই। অভিভাদন জানানোর আগে সালাম দিতে হবে।

عَنْ خَالِدِ بْنِ مَعْدَانَ قَالَ: لَقِيتُ وَاثِلَةَ بْنَ الْأَسْقَعِ فِي يَوْمِ عِيدٍ , فَقُلْتُ: تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكَ , فَقَالَ: ” نَعَمْ، تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكَ ” , قَالَ وَاثِلَةُ: ” لَقِيتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عِيدٍ فَقُلْتُ: تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكَ , قَالَ: ” نَعَمْ , تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكَ “

হযরত খালিদ বিন মা’দান থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ওয়াছিলা বিন আসক্বাহ রাঃ এর সাথে ঈদের দিন সাক্ষাৎ করলাম। তখন আমি তাকে বললামঃ তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা। তখন তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়ামিনকা। ওয়াছিলা আরো বললেনঃ আমি একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ঈদের দিন সাক্ষাৎ করেছিলাম। তখন বলেছিলামঃ তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়ামিনকা। তখন তিনিও বলেছিলেনঃ হ্যাঁ, তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়ামিনকা।

উপসংহার

আল্লাহ আমাদের ঈদ উদযাপনকে ইবাদতের মাধ্যম বানিয়ে দিন। সকল প্রকাশ হারাম ও অশালীন কাজ থেকে আমাদেরকে হেফাজত করুন। রামাদানের উদ্দেশ্য ছিল আমাদেরকে মুত্তাক্বী বানানো। ঈদের দিন ও পরবর্তী সারা বছর যেন আমরা মুত্তাক্বী হিসাবে জীবন-যাপন করতে পারি সেই তাওফিক আল্লাহ দান করুন। আমীন।

আশা করি আপনারা আমাদের আর্টিকেল থেকে ঈদুল ফিতরের দিনের আমল গুলো সম্বন্ধে ধারণা লাভ করতে পেরেছেন। আমাদের আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে আমাদের সাথেই থাকবেন।ধন্যবদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site is protected by reCAPTCHA and the Google Privacy Policy and Terms of Service apply.

Related Posts

Disclaimer: All trademarks, logos, images, and brands are property of their respective owners. If you have any opinion or request or you find any bug/issues, please Contact Us