কালোজিরা, যা কালোজিরে, কালো কেওড়া, ও নিজেলা নামেও পরিচিত, হলো একটি ছোট, কালো বীজ যা Nigella sativa গাছ থেকে উৎপাদিত হয়। এটি ভারতীয় উপমহাদেশ, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার কিছু অংশে বহুল ব্যবহৃত হয়। কালোজিরার বীজে একটি তেজ, মসলাযুক্ত স্বাদ এবং গন্ধ রয়েছে, এবং এটি বিভিন্ন রান্না, ঔষধি এবং প্রসাধনীতে ব্যবহৃত হয়। আজকের এই আর্টিকেলে কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হবে I প্রিয় পাঠকদের অনুরোধ করবো মনোযোগ সহকারে এই আর্টিকেলের শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য I
কালোজিরার ১৫ উপকারিতা
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: কালোজিরাতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
২. হজমশক্তি উন্নত: কালোজিরা হজমশক্তি উন্নত করতে, পেট ফাঁপা, গ্যাস, অম্বল, এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
৩. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে: কালোজিরা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এটি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য উপকারী।
৪. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে: কালোজিরা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এটি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য উপকারী।
৫. হৃৎপিণ্ডের সুরক্ষা: কালোজিরা খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) মাত্রা কমাতে এবং ভাল কোলেস্টেরলের (HDL) মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি হৃৎপিণ্ডের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৬. ক্যান্সার প্রতিরোধ: কালোজিরাতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে।
৭. ত্বক ও চুলের যত্ন: কালোজিরা ত্বক ও চুলের জন্য খুব উপকারী। এটি ত্বকের ব্রণ, দাগ, এবং ফুসকুড়ি দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, এটি চুল পড়া রোধ করে এবং চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।
৮. ওজন কমানো: কালোজিরা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি শরীরের চর্বি
৯. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি: কালোজিরা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।
১০. দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে : মায়েদের বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে প্রতিদিন রাত্রে শোবার আগে ৫-১০ গ্রাম কালোজিরা মিহি করে গরুর দুধের সঙ্গে খেতে হবে। ইনশাআল্লাহ্ মাত্র ১০-১৫ দিনে দুধের প্রবাহ বেড়ে যাবে। এছাড়া কালোজিরা ভর্তা করে ভাতের সঙ্গে খেলেও এ সমস্যা সমাধান হতে পারে।
১১.যৌন ব্যাধি : কালোজিরা যৌন ব্যাধি ও স্নায়ুবিক দুর্বলতায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য অতি উৎকৃষ্ট ঔষধ।
১২. অধিক ঋতুস্রাব : অধিক ঋতুস্রাব, মাত্রাতিরিক্ত ছোট ইস্তিঞ্জা প্রতিরোধ করতে কালোজিরার উপকারিতা অপরিসীম। এটি কৃমিনাশক।
১৩. প্রসূতি রোগে : শুলবেদনা ও প্রসূতি রোগে কালোজিরা অত্যধিক উপকারী। ব্রণের জন্যও এটি উত্তম ঔষধ।
১৪. অন্যান্য উপকারিতা: কালোজিরা আরও অনেক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এটি দাঁতের ব্যথা, কানের ব্যথা, মাথাব্যথা, জ্বর, এবং সর্দি-কাশির।
১৫. নিয়মিত কালোজিরা সেবন শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে সতেজ করে ও সার্বিকভাবে স্বস্থ্যের উন্নতি সাধন করে।
কালোজিরা ব্যবহারের উপায়
- কালোজিরা ভেজে খাওয়া যেতে পারে।
- কালোজিরার তেল বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
- কালোজিরা গুঁড়ো করে পানিতে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
- কালোজিরা বিভিন্ন খাবারের সাথে রান্না করে খাওয়া যেতে পারে।
কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত সমস্ত রোগের মহাওষুধ
পবিত্র হাদিস শরীফের মধ্যে কালোজিরার অনেক উপকারিতা বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ هُرَيْـرَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا مِنْ دَاءٍ اِلَّا فِي الْـحَبَّةِ السَّوْدَاءِ مِنْهُ شِفَاءٌ اِلَّا السَّامَ
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মৃত্যু ছাড়া এমন কোন রোগ নেই কালোজিরায় যার আরোগ্যতা নেই।” (মুসলিম শরীফ: কিতাবুস সালাম: হাদীছ শরীফ নং ৫৬৬১)
অন্য বর্ণনায় বর্ণিত রয়েছে- “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন রোগ-যন্ত্রণা খুব বেশী কষ্টদায়ক হয় তখন এক চিমটি পরিমাণ কালোজিরা নিয়ে খাবে তারপর পানি ও মধু সেবন করবে।” (মু’জামুল আওসাত লিত ত্ববারানী)
উপসংহার
আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে কালোজিরা উপকারিতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করে বন্ধুদের মাঝে ছড়িয়ে দিবেন। ধন্যবাদ।