স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে চিয়া সিডকে সুপারফুড হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রাচীনকাল থেকেই এটি খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। চিয়া সিডে দুধ ও ডিমের চেয়েও বেশি প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম থাকার কথা জানা যায়। চিয়া সিড হলো এক ধরনের গাছের বীজ। এটি শস্য জাতীয় উদ্ভিদ এবং মরুভূমিতে বেশি জন্মায়। ধারণা করা হয়, প্রাচীন অ্যাজটেক জাতি তাদের প্রধান খাদ্য তালিকায় চিয়া সিড অন্তর্ভুক্ত করত। দেখতে চিয়া সিড অনেকটা তিলের দানার মতো। আমেরিকা ও মেক্সিকোতে চিয়া নামক এক ধরনের গাছ জন্মে। এই গাছের বীজকেই চিয়া সিড বলা হয়। আজকের এই আর্টিকেলে চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানবো I
চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ
১. প্রোটিন: চিয়া সিডে প্রোটিনের পরিমাণ অনেক বেশি। 100 গ্রাম চিয়া সিডে প্রায় 20 গ্রাম প্রোটিন থাকে।
২. ফাইবার: চিয়া সিড ফাইবারের একটি ভালো উৎস। 100 গ্রাম চিয়া সিডে প্রায় 34.4 গ্রাম ফাইবার থাকে।
৩. ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড: চিয়া সিডে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ অনেক বেশি। 100 গ্রাম চিয়া সিডে প্রায় 17.8 গ্রাম ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে।
৪. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।
৫. ভিটামিন ও মিনারেল: চিয়া সিডে ভিটামিন B1, B2, B3, B6, E, এবং ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, এবং দস্তা থাকে।
চিয়া সিডের উপকারিতা
হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো
- চিয়া সিডে থাকা ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
- এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
- চিয়া সিড রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- এটি ইনসুলিনের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমাতে সাহায্য করে।
হজমশক্তি উন্নত করে
- চিয়া সিডে থাকা ফাইবার হজমশক্তি উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
- এটি মলত্যাগ নিয়মিত করতে সাহায্য করে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
- চিয়া সিড দীর্ঘ সময়ের জন্য পেট ভরা রাখে, যার ফলে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- এটি ক্ষুধামান্দ্য কমাতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে
- চিয়া সিডে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে।
- এটি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো
- চিয়া সিডে থাকা ক্যালসিয়াম হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
- এটি হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
ত্বক ও চুলের জন্য ভালো
- চিয়া সিডে থাকা ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বক ও চুলের জন্য ভালো।
- এটি ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে সাহায্য করে এবং চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।
মস্তিষ্কের জন্য ভালো
- চিয়া সিডে থাকা ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের জন্য ভালো।
- এটি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- চিয়া সিডে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- এটি শরীরকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
চিয়া সিড খাওয়ার বিভিন্ন উপায়
পানিতে ভিজিয়ে: ১ টেবিল চামচ চিয়া সিড 3 টেবিল চামচ পানিতে 15-20 মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এটি জেলের মতো হয়ে যাবে।সকালের নাস্তার সাথে, স্ন্যাকস হিসেবে, অথবা ডেজার্ট হিসেবে খান। স্বাদ বাড়ানোর জন্য লেবু, মধু, বা ফলের রস মিশিয়ে খান।
স্মুদিতে: ১ টেবিল চামচ চিয়া সিড আপনার প্রিয় স্মুদিতে মিশিয়ে খান। ফল, বাদাম, এবং দইয়ের সাথে মিশিয়ে পুষ্টিকর স্মুদি তৈরি করুন।
ওটমিল: ১ টেবিল চামচ চিয়া সিড আপনার ওটমিলের সাথে মিশিয়ে খান। ফল, বাদাম, এবং মধুয়ের সাথে মিশিয়ে সুস্বাদু ওটমিল তৈরি করুন।
দই: ১ টেবিল চামচ চিয়া সিড আপনার দইয়ের সাথে মিশিয়ে খান। ফল, বাদাম, এবং granola-র সাথে মিশিয়ে পুষ্টিকর দই তৈরি করুন।
সালাদে: ১ টেবিল চামচ চিয়া সিড আপনার সালাদের সাথে মিশিয়ে খান। পনির, বাদাম, এবং vinaigrette-র সাথে মিশিয়ে সুস্বাদু সালাদ তৈরি করুন।
বেকিং: ১ টেবিল চামচ চিয়া সিড আপনার কেক, ব্রেড, বা মুফিনের ব্যাটারে মিশিয়ে বেক করুন। বাদাম, শুকনো ফল, এবং মধুয়ের সাথে মিশিয়ে পুষ্টিকর বেকড খাবার তৈরি করুন।
চিয়া সিডের অপকারিতা
চিয়া সিড একটি সুপারফুড হলেও, অতিরিক্ত চিয়া সিড খাওয়ার ফলে এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে।
১. পেট খারাপ: চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে পেট খারাপ, বমি বমি ভাব, এবং ডায়রিয়া হতে পারে।
২. রক্তচাপ কমে যাওয়া: চিয়া সিড রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তবে, যাদের রক্তচাপ কম থাকে তাদের অতিরিক্ত চিয়া সিড খাওয়া রক্তচাপ আরও কমিয়ে দিতে পারে।
৩. ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া: চিয়া সিড কিছু ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া করতে পারে। তাই, যারা ওষুধ খান তাদের চিয়া সিড খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
৪. অ্যালার্জি: কিছু লোকের চিয়া সিডের প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে। অ্যালার্জির লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ফুসকুড়ি, চুলকানি, এবং শ্বাসকষ্ট।
৫. গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের জন্য: গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের চিয়া সিড খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
উপসংহার
আশা করছি আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করে বন্ধুদের মাঝে ছড়িয়ে দিবেন। ধন্যবাদ।