বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত “আমার সোনার বাংলা” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত একটি কবিতা। এটি ১৯০৫ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত বাংলা সাহিত্য সম্মেলনে প্রথম গাওয়া হয়। কবিতাটি বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং তার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রশংসা করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় এই কবিতিটি মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে “আমার সোনার বাংলা” কে জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করা হয়। জাতীয় সংগীত একটি দেশের জাতীয় পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি একটি দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধের প্রতীক। জাতীয় সংগীত দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং তাদের দেশপ্রেমের অনুভূতি জাগ্রত করে। আজকের এই আর্টিকেল তাদের জন্য যারা স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত গাইতে হয়।
যারা জাতীয় সংগীত সঠিকভাবে জানেন না অথবা জানেন কিন্তু সংশয় আছে তাদের জন্য এই আর্টিকেলটি খুবই উপকারী হবে ইনশাআল্লাহ।
জাতীয় সংগীতের প্রথম দশ লাইন
“আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি॥
ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
মরি হায়, হায় রে—
ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি॥কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো—
কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে।
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,
মরি হায়, হায় রে—
মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি॥”
বি: দ্র: বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাধারণত প্রথম দশ লাইন গাওয়া হয় I তাই পুরো দশ লাইন সুন্দরভাবে মুখস্থ করলেই আশা করি অনুষ্ঠানে গাইতে পারবেন I
সম্পূর্ণ জাতীয় সংগীতের গানটি
“আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি॥
ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
মরি হায়, হায় রে—
ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি॥কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো—
কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে।
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,
মরি হায়, হায় রে—
মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি॥তোমার এই খেলাঘরে শিশুকাল কাটিলে রে,
তোমারি ধুলামাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানি।
তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দীপ জ্বালিস ঘরে,
মরি হায়, হায় রে—
তখন খেলাধুলা সকল ফেলে, ও মা, তোমার কোলে ছুটে আসি॥ধেনু-চরা তোমার মাঠে, পারে যাবার খেয়াঘাটে,
সারা দিন পাখি-ডাকা ছায়ায়-ঢাকা তোমার পল্লীবাটে,
তোমার ধানে-ভরা আঙিনাতে জীবনের দিন কাটে,
মরি হায়, হায় রে—
ও মা, আমার যে ভাই তারা সবাই, ও মা, তোমার রাখাল তোমার চাষি॥ও মা, তোর চরণেতে দিলেম এই মাথা পেতে—
দে গো তোর পায়ের ধুলা, সে যে আমার মাথার মানিক হবে।
ও মা, গরিবের ধন যা আছে তাই দিব চরণতলে,
মরি হায়, হায় রে—
আমি পরের ঘরে কিনব না আর, মা, তোর ভূষণ ব’লে গলার ফাঁসি I”
জাতীয় সংগীত গাওয়ার নিয়ম
- দাঁড়িয়ে সোজা হয়ে গান গাইতে হবে।
- পুরুষদের মাথায় টুপি থাকলে তা খুলে ফেলতে হবে।
- জাতীয় সংগীতের সাথে তাল মিলিয়ে গান গাইতে হবে।
- মনোযোগ দিয়ে এবং শ্রদ্ধার সাথে গান গাইতে হবে I
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা ও জাতীয় সংগীতের গুরুত্ব
- ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় “আমার সোনার বাংলা” মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল।
- গানটি মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক হয়ে ওঠে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ের স্পৃহা জাগ্রত করে।
- জাতীয় সংগীত একটি দেশের জাতীয় পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
- এটি একটি দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধের প্রতীক।
- জাতীয় সংগীত দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং তাদের দেশপ্রেমের অনুভূতি জাগ্রত করে।
উপসংহার
আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে জাতীয় সংগীত সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করে বন্ধুদের মাঝে ছড়িয়ে দিবেন। ধন্যবাদ।