আপনি কি টমেটোকে শুধু সালাদের একটা উপাদান হিসেবেই দেখেন? আসলে টমেটো শুধু সুস্বাদুই নয়, এর পুষ্টিগুণও অসাধারণ। ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর এই ফলটি আমাদের শরীরকে নানা উপায়ে উপকৃত করে। এই নিবন্ধে আমরা টমেটো খাওয়ার বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব। এছাড়াও, কারা কখন টমেটো খাওয়া এড়িয়ে চলবেন, সে সম্পর্কেও জানতে পারবেন। তাহলে চলুন জেনে নিই টমেটো সম্পর্কে আরও কিছু বিস্তারিত তথ্য। আশা করি এই নিবন্ধটি আপনার জন্য উপকারী হবে।
টমেটোর পুষ্টি উপাদান
উপাদান | পরিমাণ (প্রতি ১০০ গ্রাম) |
---|---|
খাদ্যশক্তি | 18 কিলোক্যালরি |
আমিষ | 0.9 গ্রাম |
শর্করা | 3.9 গ্রাম |
ফাইবার | 1.2 গ্রাম |
চর্বি | 0.2 গ্রাম |
কোলেস্টেরল | 0 মিলিগ্রাম |
ভিটামিন এ | 833 আইইউ |
লাইকোপেন | 2573 মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন সি | 13 মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | 237 মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | 10 মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | 5 মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | 11 মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | 24 মিলিগ্রাম |
লৌহ | 0.3 মিলিগ্রাম |
জিংক | 0.17 মিলিগ্রাম |
টমেটো খাওয়ার উপকারিতা
১) শরীর, চোখ, চুল ও ত্বক ভালো রাখে
টমেটোতে থাকা ভিটামিন এবং খনিজগুলি শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে, এটি শরীরের কোষগুলিকে মেরামত করতে এবং নতুন কোষ তৈরি করতে সহায়তা করে। টমেটোতে থাকা ভিটামিন এ চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে এবং মোটিয়াবিণ্ডের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। টমেটোতে থাকা ভিটামিন সি চুলের গোড়া শক্ত করে এবং চুলের বৃদ্ধি ঘটায়। এছাড়াও, এটি চুলের ময়দা দূর করে এবং চুলকে মসৃণ করে তোলে। টমেটোতে থাকা লাইকোপিন ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে রক্ষা করে এবং ত্বকের কোষগুলিকে মেরামত করে। এছাড়াও, এটি ত্বকের বলিরেখা এবং দাগ কমাতে সাহায্য করে।
২) দাঁত ও হাড়ের জন্য উপকারি
টমেটোতে থাকা ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন কে দাঁত ও হাড়কে শক্তিশালী করে। এছাড়াও, এটি হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
৩) ওজন কমায়
টমেটোতে ক্যালোরি খুবই কম এবং এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। ফাইবার আমাদের পেট ভরে রাখে এবং ওজন কমানোতে সাহায্য করে।
৪) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
টমেটোতে থাকা লাইকোপিন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
৫) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
টমেটোতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
৬) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
টমেটোতে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও, এটি শরীরকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
৭) জয়েন্টের ব্যথায় কমায়
টমেটোতে থাকা বিভিন্ন উপাদান জয়েন্টের প্রদাহ কমাতে এবং জয়েন্টের ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে।
৮) গর্ভাবস্থায় উপকার করে
টমেটোতে থাকা ফোলেট গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়।
৯) ধুমপানজনিত ক্ষয় পূরনে সহায়তা করে
ধূমপানের কারণে শরীরে যেসব ক্ষতি হয়, টমেটোতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি সেগুলো মেরামত করতে সাহায্য করে।
১০) কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেতে সাহায্য করে
টমেটোতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
টমেটো খাওয়ার অপকারিতা
টমেটো খাবারের স্বাদ বাড়াতে সাহায্য করে, তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আসুন জেনে নেওয়া যাক টমেটো অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে কী কী সমস্যা হতে পারে:
১) পাকস্থলীর সমস্যা
টমেটোতে ম্যালিক ও সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে যা পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিড সৃষ্টি করে। যাদের পেটের পীড়া আছে তাদের জন্য টমেটো খাওয়া উচিত নয়।
২) ত্বকের অ্যালার্জি
টমেটোতে হিস্টামিন নামক এক ধরনের উপাদান থাকে যা ত্বকে অ্যালার্জি সৃষ্টি করে।
৩) কিডনি পাথর
টমেটোতে ক্যালসিয়াম ও অক্সালেট থাকে যা কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে। কিডনিতে পাথর জমে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
৪) গাঁটে বাত
টমেটোতে সোলানিন নামক এক ধরনের অ্যালকালয়েড থাকে যা প্রদাহ সৃষ্টি করে। গাঁটে বাতের সমস্যা বাড়তে পারে।
৫) ত্বকের রঙ বদল
টমেটোতে থাকা লাইকোপেন অতিরিক্ত মাত্রায় শরীরে জমা হলে ত্বকের রঙ বদলে যেতে পারে। লাইকোপিনোডার্মিয়া নামক একধরনের সমস্যা হতে পারে।
উপসংহার
আশাকরি আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। আমরা দেখলাম যে টমেটো শুধু সুস্বাদুই নয়, এর পুষ্টিগুণও অসাধারণ। এতে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরকে নানা উপায়ে উপকৃত করে। তবে, সবকিছুর মতো টমেটো খাওয়ার ক্ষেত্রেও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। সার্বিকভাবে বলতে গেলে, টমেটো একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। তবে, সব ধরনের খাবারের মতো টমেটোও মিতব্যয়ী হারে খাওয়া উচিত। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন I ধন্যবাদ।