ডিম, আমাদের দৈনন্দিন খাবারের একটি অতি পরিচিত উপাদান। প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস হিসেবে ডিমকে সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। কিন্তু ডিম খাওয়ার সবসময়ই সুফল আসে না, এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। এই আর্টিকেলে আমরা ডিম খাওয়ার বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করব। ডিম আমাদের শরীরকে কীভাবে উপকার করে, কোন কোন রোগ প্রতিরোধে ডিম সাহায্য করতে পারে, এবং অতিরিক্ত ডিম খাওয়ার ফলে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে, এই সব বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হবে। ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যকর হলেও, সবাইকে সমান পরিমাণে ডিম খাওয়া উচিত নয়। বিভিন্ন ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী ডিম খাওয়ার পরিমাণ নির্ধারণ করা উচিত। এই আর্টিকেলটি আপনাকে ডিম সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান দেবে এবং আপনার জন্য সঠিক পরিমাণে ডিম খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।
ডিমের পুষ্টিগুণের তালিকা
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ (প্রতি ৫০ গ্রাম, প্রায় ১টি ডিম) |
---|---|
শক্তি | 143 ক্যালোরি |
কার্বোহাইড্রেট | 0.72 গ্রাম |
প্রোটিন | 12.56 গ্রাম |
ফ্যাট | 9.51 গ্রাম |
ফসফরাস | 198 মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | 138 মিলিগ্রাম |
জিঙ্ক | 1.29 মিলিগ্রাম |
ভিটামিন | A, D, E, B12 |
খনিজ পদার্থ | আয়রন, কোলেস্টেরল, কোলিন |
বায়োলজিক্যাল ভ্যালু | 96 |
ডিম খাওয়ার উপকারিতা
১. ওজন কমায়:
অনেকের ধারণা যে, ডিম খেলে ওজন বাড়ে। কিন্তু সত্যি কথা হল, ডিমে কম পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে এবং এটি আমাদেরকে দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরা রাখে। ফলে আমরা অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে ফেলতে পারি এবং ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারি।
২. দেহে শক্তি যোগায়:
ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং ভিটামিন বি রয়েছে। এই পুষ্টি উপাদানগুলি শরীরকে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে এবং আমাদের সারা দিন কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করে।
৩. দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়:
ডিমে লুটিন এবং জিয়াক্সানথিন নামক দুটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ম্যাকুলার ডিজেনারেশন এবং ক্যাটারাক্টের মতো চোখের সমস্যা প্রতিরোধ করে।
৪. হাড় শক্ত ও মজবুত করে:
ডিমে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে যা হাড়কে শক্তিশালী করে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমায়।
৫. প্রোটিনের উৎস হিসাবে কাজ করে:
প্রোটিন শরীর গঠনের মূল উপাদান। ডিমে উচ্চমানের প্রোটিন রয়েছে যা পেশি গঠন, ক্ষত সারানো এবং শরীরের কোষ মেরামত করতে সাহায্য করে।
৬. ত্বক ও মস্তিষ্ক ভালো রাখে:
ডিমে থাকা ভিটামিন ই এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ত্বককে স্বাস্থ্যকর রাখতে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।
৭. ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:
ডিমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে।
৮. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়:
ডিমে ভালো ধরনের ফ্যাট থাকে যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
৯. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
ডিমে ভিটামিন ডি এবং জিঙ্ক রয়েছে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
১০. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ রাখে:
ডিমে ভালো ধরনের কোলেস্টেরল থাকে যা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
ডিম খাওয়ার অপকারিতা
ডিম আমাদের খাদ্যতালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও, অতিরিক্ত ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আসুন জেনে নিই কেন:-
১. উচ্চ কোলেস্টেরলের ঝুঁকি:
ডিমের কুসুমে উচ্চ পরিমাণে কোলেস্টেরল থাকে। অতিরিক্ত কোলেস্টেরল রক্তনালীতে জমে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। হার্টের রোগী, হাই কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরও বেশি।
২. ভিটামিনের ঘাটতি:
ডিমের সাদা অংশ প্রচুর পরিমাণে অ্যালবুমিন ধারণ করে যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। তবে, অতিরিক্ত অ্যালবুমিন গ্রহণের ফলে শরীরে বায়োটিন নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
৩. অ্যালার্জি:
অনেক মানুষের ডিমের প্রতি অ্যালার্জি থাকে। এরা ডিম খেলে চামড়ায় ফুসকুড়ি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি সমস্যায় ভুগতে পারে।
৪. পাকস্থলীর সমস্যা:
অতিরিক্ত ডিম খাওয়ার ফলে অনেকের পেটে গ্যাস বা অস্বস্তি হতে পারে।
উপসংহার
আশাকরি আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। ডিম, আমাদের খাদ্যতালিকার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও, এর অতিরিক্ত সেবন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। একদিকে ডিম আমাদের শরীরকে প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ যোগায়, অন্যদিকে অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। পরিশেষে বলা যায়, ডিম একটি পুষ্টিকর খাবার হলেও, সবকিছুর মতো ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রেও মিতব্যয়ী হওয়া জরুরি। ব্যক্তিভূত স্বাস্থ্যের ওপর ভিত্তি করে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ডিম খাওয়ার পরিমাণ নির্ধারণ করা উচিত। সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা উচিত। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন I ধন্যবাদ।