নামাজ মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। নামাজের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সাথে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করে। নামাজের প্রত্যেক রুকনে দোয়া, তাসবিহ, তাহলিলের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর প্রশংসা করে এবং তার নৈকট্য অর্জন করতে চায়। এই সব দোয়া ও জিকির কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকেও আল্লাহর তাসবিহ এবং দোয়া করা হয়। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা দুই সিজদার মাঝের দোয়া সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব।
সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকের দোয়া পড়া কি ওয়াজিব?
নামাজের অন্যান্য দোয়াগুলির মতো, দুই সিজদার মাঝের দোয়াও সুন্নত। তবে এটি ওয়াজিব কিনা, এ নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে।
- অধিকাংশ আলেম (জমহুর ওলামা) মনে করেন, এটি ওয়াজিব নয়, বরং মুস্তাহাব। তাদের মতে, ওয়াজিব হওয়ার জন্য স্পষ্ট কোনো দলিল নেই।
- হাম্বলি মাজহাব মনে করে, এটি ওয়াজিব। তাদের যুক্তি হল, রাসুল (সাঃ) নিয়মিতভাবে দুই সিজদার মাঝে এটি পড়তেন। এছাড়াও, নামাজের প্রতিটি অংশ আল্লাহর জিকির দ্বারা পরিপূর্ণ, এবং সকল জিকিরই ওয়াজিব।
- কিছু হাম্বলি আলেম জমহুর ওলামাদের মতামত গ্রহণ করেছেন।
দুই সিজদার মাঝের দোয়া
দুই সিজদার মাঝের দোয়ার সম্পর্কিত হাদিসে শব্দগুলোর ক্ষেত্রে বিভিন্নতা রয়েছে। কোথাও কম, আবার কোথাও বেশি। সব মিলিয়ে এই দোয়ায় সাতটি শব্দ রয়েছে। সে হিসেবে দোয়াটির পূর্ণ রূপ এমনঃ-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ، وَارْحَمْنِي ، وَاجْبُرْنِي ، وَاهْدِنِي ، وَارْزُقْنِي ، وَعَافِنِي ، وَارْفَعْنِي
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাগ ফিরলি, ওয়ার হামনি, ওয়াজবুরনি, ওয়াহদিনি, ওয়ারজুকনি, ওয়া আ’ফিনি ওয়ারফা’নি।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমার ওপর রহম করুন। আমার প্রয়োজন পুরো করে দিন। আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন এবং আমাকে রিজিক দান করুন। আমাকে সুস্থতা দান করুন এবং আমার সম্মান বৃদ্ধি করুন। (আবু দাউদ, হাদিসঃ ৮৫০; ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৮৮৮)
দুই সিজদার মাঝের দোয়ার ফজিলত কি?
দুই সিজদার মাঝে দোয়া পাঠের ফজিলত অনেক। যদিও এ দোয়া পাঠ করা সুন্নত (মুস্তাহাব) হিসেবে বিবেচিত হয়, তবে এই দোয়ার মর্যাদা ও গুরুত্ব অনেক বেশি। এই দোয়ার অর্থ বোঝার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে এর পাঠের মাধ্যমে আমরা কী চাই তা বুঝতে পারি। এই ছোট্ট দোয়ার মাধ্যমে একজন আল্লাহর কাছে বিভিন্ন বিষয় চাইতে পারেন।
এই দোয়ার অর্থ বুঝলে আমরা বুঝতে পারি যে আমরা এটি পাঠ করার সময় কী চাই – ক্ষমা, রহমত, হিদায়াত এবং রিজিক চাই। প্রতিদিন, জেনে বা না জেনে, আমরা অনেক গুনাহ করি। এই দোয়া পাঠের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারি।
আল্লাহ যদি এই ছোট্ট দোয়া কবুল করেন, তাহলে নিঃসন্দে আমরা প্রচুর নেকী পাব। নিয়মিত এই দোয়া পাঠের মাধ্যমে আমাদের রিজিক বৃদ্ধি পাবে এবং আমরা হিদায়াতের পথ খুঁজে পেতে পারি। এছাড়াও, উল্লেখ করা হয়েছে যে কুরআন থেকে একটি অক্ষর পড়া আমাদের দশটি নেকী দেয়। এই দোয়ার মাধ্যমে আমাদের নেক আমলের হিসাব উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
উপসংহার
আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা, প্রত্যেক নামাজে সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে আল্লাহর তাসবিহ-তাহলিল করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর হুকুম আহকাম পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।