প্রাকৃতিক প্রয়োজন ও প্রস্রাব সময়ে টয়লেটে যেতে হয়। এই সময়ে, দুষ্ট জিনের দুর্দশা থেকে নিজেকে রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। বিনা অসুবিধায় প্রয়োজন সম্পন্ন করার পর আল্লাহর কাছে শুকরিয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করতে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন স্বয়ং নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাই টয়লেটে প্রবেশের আগে ও পরে যাবতীয় অনিষ্টতা ও ক্ষতি থেকে বাঁচতে দোয়া পড়া সুন্নাতি আমল। নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেও এই দোয়াগুলি পড়তেন। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা বাথরুমে প্রবেশ করার দোয়া ও বাথরুম থেকে বের হওয়ার দোয়া সম্পর্কে জানব।
বাথরুমে প্রবেশ করার দোয়া
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম টয়লেটে প্রবেশের সময় বলতেনঃ-
اَللهُمَّ إِنّيْ أَعًوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَ الْخَبَائِثِ
উচ্চারণঃ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবায়িছ।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে পুরুষ ও নারী শয়তানের অনিষ্ট তথা ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই।’ (বুখারি)
অন্য বর্ণনায় এসেছেঃ-
হজরত আলি ইবনু আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, টয়লেটে ঢুকার সময় জিনের চোখ ও আদম সন্তানের গোপনীয় অঙ্গসমূহের মধ্যে অন্তরাল সৃষ্টি করতে চাইলে; বলতে হবে-
بِسْمِ اللهِ
উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি’
অর্থঃ আল্লাহর নামে। (তিরমিজি)
সুতরাং টয়লেটে প্রবেশের সময় এভাবে দোয়া করা যায়ঃ-
بِسْمِ اللهِ اَللهُمَّ إِنّيْ أَعًوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَ الْخَبَائِثِ
উচ্চারণঃ ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবায়িছ।’
অর্থঃ ‘আল্লাহর নামে (শুরু করছি); হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে পুরুষ ও নারী শয়তানের অনিষ্ট তথা ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই।’ (বুখারি, মুসলিম, ইবনে মাজাহ)
বাথরুম থেকে বের হওয়ার দোয়া
বাথরুম থেকে বের হয়ে পড়তে হয়, ‘গুফরানাকা’ হে আল্লাহ আপনার কাছে ক্ষমা চাই, অতঃপর প্রথমে ডান পা এবং পরে বাঁ-পা দিয়ে পায়খানা থেকে বের হতে হয়। তারপর নিচের দোয়াটি পাঠ করতে হয়ঃ-
الحمدُ للهِ الذي أَذْهَبَ عَنَّى الأَذَى وعَافَانِي
উচ্চারণঃ আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আজহাবা আন্নিল আজা ওয়া আফানি।
অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমার হতে কষ্টদায়ক বিষয়সমূহ দূর করেছেন। আমাকে নিস্তার দিয়েছেন। (আবু দাউদ ৩০, ইবনে মাজাহ, হাদিস ৩০১)
যে কারনে দোয়া পড়া জরুরী
পায়খানা-প্রস্রাবের স্থান টয়লেট হলো নাপাকি বা ময়লা আবর্জনা ত্যাগের জায়গা। আর এ টয়লেটে দুষ্ট ও বদ জিনদের বাসস্থান। কোনো ব্যক্তি যখন টয়লেটে প্রস্রাব-পায়খানা করতে প্রবেশ করে আর দোয়া না পড়ে, তবে এসব দুষ্ট ও বদ জিন মানুষের মোস্ট সেনসিটিভ অরগ্যান (লজ্জাস্থান) নিয়ে খেলা করে।
আর যারা প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণে টয়লেটে প্রবেশ করার আগে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনায় হাদিসে বর্ণিত দোয়া পড়ে, তবে দুষ্ট ও বদ জিন তাদের দেখতে পায় না।
এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতে মুহাম্মাদিকে টয়লেটে প্রবেশের আগে সব সময় আল্লাহর কাছে দুষ্ট ও বদ জিনের আক্রমণ থেকে আশ্রয় চাওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। তিনি নিজেও এর ওপর আমল করতেন।
বাথরুমে যাওয়ার আদব সমুহ
- বাম পা দিয়ে প্রবেশ করা
- উপরের দুআ পড়া।
- পরিষ্কার হওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ খেয়াল করা।
- পানি ব্যবহার এর পূর্বে টিসু বা পবিত্র মাটির ঢিলা (কুলুখ) ব্যবহার করা। হাড় বা শুকনো গোবর দ্বারা কুলুখ করা যাবেনা।কাপড়ের টুকরো বা টিসু পেপার দিয়ে কুলুখ করা যায়
- কুলুখ ব্যবহার করার পর পানি ব্যবহার করবে। কারন পানির মাধ্যমে ভালো পরিষ্কার করা যায়।
- পুরোপুরি কাপড় উঠিয়ে না বসা। সতর ঠিক রাখার চেস্টা করা।
- টয়লেটে মাথা ঢেকে রাখা। (বায়হাকি শরীফ) । টুপি রুমাল বা অণ্য কাপড় দ্বারা মাথা ঢেকে রাখা।
- কিবলার দিকে মুখ বা পিঠ করে না বসা। (বোখারী)
- টয়লেটে খালি পায়ে না যাওয়া।
- প্রসাব পায়খানা দাড়িয়ে না করা।
- বাম হাত দিয়ে কুলুখ বা পানি ব্যবহার করা। লজ্জাস্হান ডান হাতে স্পর্শ করবেনা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বাথরুমে প্রবেশের আগে এবং বাথরুম থেকে বের হয়ে হাদিসের দিকনির্দেশনা মেনে দোয়া পড়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর আমল কারার তাওফিক দান করুন। আমিন।
উপসংহার
আশাকরছি আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে বাথরুমে প্রবেশ করার দোয়া ও বাথরুম থেকে বের হওয়ার দোয়া সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করে বন্ধুদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার অনুরোধ রইলো।