প্রিয় পাঠক আসসালামু আলাইকুম, সবাইকে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানাই। বিজয় দিবস বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে একটি গৌরবময় দিন। এই দিনেই বাঙালি জাতি বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এই দিনেই পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের নাম লেখা হয়। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে। এই দিনে আমাদের দেশে বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান হয়। আর সেই অনুষ্ঠানে অনেকেরই ১৬ই ডিসেম্বর বক্তব্য দিতে হয়। কিন্তু সবাই তো সুন্দর করে বক্তব্য দিতে পারে না। তাই আজকে আমরা ১৬ই ডিসেম্বর বা বিজয় দিবসের জন্য একটি আদর্শ বক্তব্য শেয়ার করব।
বিজয় দিবসের বক্তৃতা প্রদানের পূর্বে প্রস্তুতি গ্রহণ
যেকোনো কাজের জন্য সঠিক প্রস্তুতি অপরিহার্য। বক্তৃতা প্রদানের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। বিজয় দিবসের বক্তৃতা প্রদানের জন্যও সঠিক প্রস্তুতি নিতে হয়। প্রথমে বিজয় দিবসের তাৎপর্য ও ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এটি করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বিজয় দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, বিজয় দিবসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সুন্দরভাবে সংক্ষেপে গুছিয়ে লিখতে হবে। এটি করার জন্য খাতায় বা কম্পিউটারে বিজয় দিবসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো লিখে নিতে হবে।
তৃতীয়ত, বক্তৃতা প্রদানের সময় নার্ভাসনেস কাটাতে হবে। এটি করার জন্য আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বারবার বক্তৃতা দিতে হবে। এতে করে ভিতরের দুর্বলতা দূর হয়ে যাবে।
চতুর্থত, স্টেজে উঠার আগে নিজেকে পরিপাটি করে নিতে হবে। বিজয় দিবসের বক্তৃতা প্রদানের ক্ষেত্রে বাঙালি সংস্কৃতির সাথে মানানসই পোশাক পরা উচিত।
পঞ্চমত, বক্তৃতা প্রদানের সময় আত্নবিশ্বাসী থাকতে হবে। বক্তৃতায় গভীর আবেগ ফুটিয়ে তুলতে হবে।
বিজয় দিবসের বক্তৃতা প্রদানের জন্য কিছু টিপসঃ–
১. বক্তৃতার শুরুতেই শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে হবে।
২. বক্তৃতায় তথ্যবহুল ও আকর্ষণীয় উপস্থাপনা করতে হবে।
৩. বক্তৃতায় বিভিন্ন উদাহরণ ও প্রসঙ্গ ব্যবহার করতে হবে।
৪. বক্তৃতার শেষে শ্রোতাদের মনে একটি ইতিবাচক বার্তা রেখে যেতে হবে।
এই টিপসগুলো অনুসরণ করে আপনি একটি সফল বিজয় দিবসের বক্তৃতা প্রদান করতে পারবেন
বিজয় দিবসের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা/বিজয় দিবসের সংক্ষিপ্ত ভাষণ
বক্তৃতা (১)
প্রিয় দেশবাসী,
আজ ১৬ই ডিসেম্বর, আমাদের মহান বিজয় দিবস। এই দিনে আমরা সবাই গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করি আমাদের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবীদের। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।
বিজয় দিবসের এই দিনে আমরা আবারও স্মরণ করি মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস। আমরা জানি, এই বিজয় আসেনি সহজে। পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আমরা এ বিজয় অর্জন করি।এই বিজয়ের পিছনে রয়েছে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসামান্য আত্মত্যাগ ও বীরত্ব। তারা দেশমাতৃকার জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছেন। তাদের এই আত্মত্যাগ আমাদের চিরকালের অনুপ্রেরণা।
আজ আমরা স্বাধীন দেশে বসবাস করছি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন আজও পুরোপুরি পূরণ হয়নি। আমাদের দেশে এখনও গণতন্ত্রের চর্চা নেই, আইনের শাসন নেই, দুর্নীতি ও অনিয়ম বিরাজমান।তাই আমাদের সকলের উচিত এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য একসাথে কাজ করা। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ করে দেশ গঠনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
আসুন আমরা সকলে মিলে দেশকে একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলি।
জয় বাংলা!
বক্তৃতা (২)
আজ মহান বিজয় দিবস। ১৬ ডিসেম্বরের এই দিনে বাংলাদেশ লিখিতভাবে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ১৯৭১ সালের এই দিনে পৃথিবীর বুকে নতুন এক দেশের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। সেই দেশটির নাম হচ্ছে আমাদের আজকের এই বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে লিপ্ত হয়। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ চলতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত বিজয় ছিনিয়ে আনে সাহসী সৈনিকরা। বাংলাদেশের এই যুদ্ধ ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের জন্য যুদ্ধ। পরাধীনতার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার যুদ্ধ, মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের জন্য যুদ্ধ।
নিজের মাতৃভূমির কপালে বিজয় লাল টিপ পড়াতে লাখো শহীদ তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে। বাঙালি মা-বোনরা হারিয়েছে তাদের সম্মান, হয়েছেন নির্যাতনের শিকার। আমরা সেই লাখ লাখ বীর শহীদের স্মরণ করি এবং তাদের বুকের তাজা রক্তগুলোকে সম্মান করে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। তাদের এই রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের এই স্বাধীনতা।আমরা পেয়েছি যে, বিজয় অর্জনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল আমাদের বাঙালিদের মাঝেই কিছু মানুষ রুপী পশু। বিজয়ের ৫১তম বছরে এসেও এই নরপশুদের এখনো পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে বিচারকার্য শেষ হয়নি।
লাখো লাখো বাঙালির রক্তের বিনিময় এবং বাংলার মা-বোনেদের সমন্বয়ের বিনিময়ে কেনা আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ এর মধ্যে যুদ্ধাপরাধীরা আজও পর্যন্ত বসবাস করছে। এই লজ্জা আমাদের, এই অপমান আমাদের মায়ের মতো দেশের জন্য।
বক্তৃতা (৩)
মাননীয় সভাপতি, প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি এবং উপস্থিত সুধীবৃন্দ, আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। এ দিনটি বাঙালি জাতির জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। এই দিনটিতেই আমরা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধ শেষে বিজয় অর্জন করি।
মহান বিজয় দিবস আমাদের জন্য গৌরবের দিন। এই দিনটিতে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করি। আমরা তাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে ধরে রাখার শপথ করি। মহান বিজয় দিবস আমাদের জন্য একটি নতুন দিগন্তের সূচনা।
এই দিনটিতে আমরা একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করি। এই দিনটিতেই আমরা আমাদের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করি এবং নতুন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করি।মহান বিজয় দিবস আমাদের জন্য একটি আনন্দের দিন। এই দিনটিতে আমরা আনন্দ-উৎসব পালন করি। আমরা একে অপরকে শুভেচ্ছা জানাই। আমরা আমাদের বিজয়ের আনন্দ ভাগাভাগি করি।
আজ আমরা মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। আমরা তাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে ধরে রাখার শপথ করি।
বক্তৃতা (৪)
উপস্থিত সুধীবৃন্দ,
আজকের এই মহান বিজয় দিবসে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনিই ছিলেন বাঙালি জাতির মুক্তির মহান নেতা। তার নেতৃত্বেই আমরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বিজয় অর্জন করি।
আমরা স্মরণ করছি বঙ্গবন্ধুর সেই ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। এই ভাষণে তিনি বাঙালি জাতির স্বাধীনতার ডাক দেন। এই ভাষণের পরই বাঙালি জাতি স্বাধীনতার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
আমরা আরও স্মরণ করছি বঙ্গবন্ধুর আহব্বানে যারা স্বাধীনতার সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা, নারী-পুরুষ-শিশু, যারা যুদ্ধের বিভিন্ন রণাঙ্গনে অসীম সাহস ও বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ত্রিশ লক্ষ শহীদ, যারা তাদের জীবনের বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীনতা অর্জন করে দিয়েছেন।
আজ আমরা তাদের সকলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। আমরা তাদের আত্মার শান্তি কামনা করি। আমরা শপথ করি, তাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতাকে আমরা চিরদিন ধরে রাখব। আমরা আমাদের দেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করব।
বক্তৃতা (৫)
প্রিয় সুধীবৃন্দ,
আজ মহান বিজয় দিবস। এই দিনটি বাঙালি জাতির জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। এই দিনটিতেই আমরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বিজয় অর্জন করি।
এই বিজয়ের মূল কারিগর ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনিই ছিলেন বাঙালি জাতির স্বাধীনতার মহান নেতা। তার নেতৃত্বেই আমরা বিজয় অর্জন করি। ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির স্বাধীনতার ডাক দেন। এই ভাষণের পরই বাঙালি জাতি স্বাধীনতার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা অসীম সাহস ও বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তারা তাদের জীবনের বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীনতা অর্জন করে দিয়েছেন। আমরা তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
মহান বিজয় দিবসে আমরা শপথ করি, আমরা তাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতাকে চিরদিন ধরে রাখব। আমরা আমাদের দেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করব। আমরা চাই, আমাদের দেশে কোন দুর্নীতি, অশান্তি, অজ্ঞতা বা অনাহারি থাকবে না। আমরা চাই, আমাদের দেশে শুধুমাত্র শান্তি, সুখ ও সমৃদ্ধি থাকবে।
আমরা চাই, আমাদের দেশ বিশ্বের মানচিত্রে একটি নবজাগরণের উদ্দীপ্ত দেশ হিসেবে পরিচিত হোক। আমরা সকলে মিলে এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করব। আমরা কঠোর পরিশ্রম করব। আমরা প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
আমরা চাই, আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ একটি আদর্শ দেশ হিসেবে গড়ে উঠুক। আসুন আমরা সকলে মিলে আমাদের দায়িত্বসমূহ যথাযথভাবে পালন করে দেশ গড়ে তুলি। আইরিশ দার্শনিক এন্ডুমন্ড বার্কের উক্তিটি স্মরণ করুন, “যদি আমরা আমাদের দেশকে ভালোবাসতে চাই, তবে আমাদেরকে দেশকে ভালোবাসার মতো করে গড়ে তুলতে হবে।”
সমাজের কাছে আমরা প্রত্যেকেই দায়বদ্ধ। আমাদের ঋণ পরিশোধের দায়-দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। ক্ষুধার্তকে খাদ্য এবং অক্ষরকে জ্ঞানের আলো দিয়ে এই স্বাধীনতাকে সার্থক করে তুলতে হবে। তাই সব ধরনের বিভেদ-বিচ্ছেদ ভুলে, হানাহানি ও সংঘাত দূর করে, সংকীর্ণ স্বার্থপরতা জলাঞ্জলি দিয়ে দেশ গড়ার কাজে ব্রতী হই। দেশের ও সমাজের স্বার্থের প্রশ্নে সকল বিবেকবান মহলেরই একযোগে কাজ করা উচিত। এখানে বিভেদ নয়, ঐক্য কাম্য।
সুধীবৃন্দ,যারা অসীম ধৈর্য নিয়ে আমার বক্তব্য শুনেছেন, আপনাদের সকলকে অশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি। আসসালামু আলাইকুম।
উপসংহার
আজকের এই আর্টিকেলে বিজয় দিবস উপলক্ষে কিছু ভাষণ ও বক্তব্য তুলে ধরেছি এবং বক্তব্যের পূর্ব প্রস্তুতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। যা আপনার বক্তব্য এবং ভাষণকে সুন্দর ও সাবলীল করে উপস্থাপন করার সাহস যোগাবে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ।