শৈশব থেকেই আমরা শুনে আসছি যে রাতে ঘুমানোর আগে গরম দুধ খেলে ভালো ঘুম হয়। কিন্তু এই ধারণার পেছনে আসলে কতটা সত্যতা আছে? দুধ কি সত্যিই আমাদের ঘুমকে ভালো করে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এই লেখাটি। আমরা সবাই জানি, দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। কিন্তু এর পাশাপাশি দুধে রয়েছে ট্রিপ্টোফ্যান নামক একটি অ্যামিনো অ্যাসিড। এই ট্রিপ্টোফ্যান আমাদের মস্তিষ্কে সেরোটোনিন হরমোন উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে। সেরোটোনিনকে আবার ‘হ্যাপি হরমোন’ও বলা হয়। এই হরমোন আমাদের মনকে শান্ত করে এবং ঘুম আনতে সাহায্য করে। তাহলে কি রাতে ঘুমানোর আগে দুধ খেলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? না, কিন্তু এটি ঘুমের গুণগত মান বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। তবে এছাড়াও ভালো ঘুমের জন্য একটি নিয়মিত জীবনযাত্রা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম অত্যন্ত জরুরি। এই লেখায় আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো রাতে ঘুমানোর আগে দুধ খাওয়ার উপকারিতা, কত পরিমাণ দুধ খাওয়া উচিত, এবং কাদের জন্য দুধ খাওয়া উপকারী নয়। আশা করি এই লেখা আপনাদের জন্য উপকারী হবে।
রাতে ঘুমানোর আগে দুধ খাওয়ার উপকারিতা
১) মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করে
দুধে থাকা ট্রিপটোফ্যানের পাশাপাশি অন্যান্য উপাদানও রয়েছে যা স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে। মানসিক চাপ কমলে ঘুমের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়।
২) রাতে ভালো ঘুম হয়
রাতে ঘুম না আসলে অনেকেই দুধ খাওয়ার পরামর্শ পান। দুধে থাকা কিছু উপাদান স্ট্রেস কমিয়ে দেয় এবং ভালো ঘুমে সাহায্য করে।
৩) গলা-বুক জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি দেয়
রাতে রুটি খেলেই গলা-বুক জ্বালা করে? রাতে শোওয়ার আগে ঠান্ডা দুধ খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলতে পারে। দুধ পাকস্থলির মধ্যে থাকা অতিরিক্ত পাচক রস, অ্যাসিড শোষণ করতে সাহায্য করে।
৪) হাড়কে শক্তিশালী করে
দুধে থাকা ভিটামিন ডি আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে এবং ফলে হাড় মজবুত হয়। বিশেষ করে নারীদের জন্য হাড়ের সমস্যা যেমন অস্টিওআর্থ্রাইটিসের জন্য দুধ খুব উপকারী।
৫) সারাদিনের শক্তি সঞ্চয় করে
রাত্রে এক গ্লাস হালকা গরম দুধ খেয়ে ঘুমাতে গেলে পরদিন সকালে আপনার এনার্জি লেভেল দেখে আপনি নিজেই অবাক হয়ে যেতে পারেন। যেহেতু দুধের মধ্যে প্রোটিন এবং ল্যাক্টিন রয়েছে তা আপনাকে রিল্যাক্স করতে সাহায্য করে, ফলে আপনি সকালে বেশ তরতাজাভাবে ঘুম থেকে ওঠেন এবং সারাদিনের জন্য কাজে এনার্জি পান।
৬) পেশির প্রদাহ নিরাময় করে
খেলাধুলা, জিম কিংবা কায়িক পরিশ্রম করে গায়ে ব্যথা হয়েছে? রাতে ঘুমোনোর আগে এক কাপ হালকা গরম দুধ খেয়ে দেখুন, পরের দিন অনেকটা আরাম মিলবে। দুধের মধ্যে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড পেশির প্রদাহ নিরাময়ে সাহায্য করে।
৭) কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে
প্রতি রাতে শুতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস করে লো-ফ্যাট দুধ খেলে শরীরের কোলেস্ট্রল লেভেল অনেকটাই কমে এবং শরীর সুস্থ থাকে। দুধে যে প্রোটিন থাকে তা খারাপ কোলেস্ট্রেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্ট্রলের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
৮) সর্দি-কাশি থেকে আরাম দেয়
হালকা ঠান্ডা লাগলে গরম দুধ পান করা একটি প্রচলিত ঘরোয়া প্রতিকার। দুধ গলাকে শান্ত করে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
রাতে দুধ খাওয়ার অসুবিধাগুলি
১) ওজন বৃদ্ধি
রাতে দুধ খেলে আমাদের শরীরের ওজন বাড়তে পারে। কারণ দুধে অনেক ক্যালোরি থাকে, যা শরীরে জমে ফ্যাট হিসেবে পরিণত হয়।
২) হজমের সমস্যা
অনেকেরই দুধ খেলে হজমের সমস্যা হয়। বিশেষ করে রাতে দুধ খেলে এই সমস্যা আরো বাড়তে পারে। এতে পেট ফোলা, গ্যাস, অম্বল ইত্যাদি হতে পারে।
৩) ঠান্ডা দুধের ক্ষতি
ঠান্ডা দুধ খেলে গলায় ব্যথা হতে পারে এবং পেটেও অস্বস্তি হতে পারে।
উপসংহার
আশাকরি আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে রাতে ঘুমানোর আগে দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম দুধ খাওয়ার অভ্যাস অনেকের কাছেই পরিচিত। এই প্রচলিত ধারণার পেছনে বৈজ্ঞানিক যুক্তিও আছে। দুধে থাকা ট্রিপ্টোফ্যান নামক অ্যামিনো এসিড শরীরে সেরোটোনিন হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করে। সেরোটোনিন মস্তিষ্ককে শান্ত করে এবং ঘুম ভালো করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, দুধে থাকা ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি হাড়কে মজবুত রাখতে সাহায্য করে। রাতে শরীর বিশ্রাম নেয়, এই সময় ক্যালসিয়াম শোষণের হার বেড়ে যায়। তাই রাতে দুধ খাওয়া হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে সবাইকেই রাতে দুধ খাওয়া উচিত এমন নয়। যাদের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা আছে, তাদের জন্য দুধ খাওয়া সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আবার, ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন এমন ব্যক্তিদের জন্য রাতে দুধ খাওয়া খুব একটা ভালো ধারণা নাও হতে পারে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন I ধন্যবাদ।