রমজানের রোজা রাখা সকল মুমিন বান্দার জন্য ফরজ করা হয়েছে। ইসলামি শরিয়াহ্ মতে, রোজার শুদ্ধতা ও যথার্থতার জন্য নির্ধারিত কিছু বিধি-বিধান রয়েছে, যার ব্যতিক্রম ঘটলে রোজা ভেঙ্গে যায়, অনেক ক্ষেত্রে মাকরুহ হয়ে যায়। যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোজা রাখবে না বা ভঙ্গ করবে তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ ও সবল মুমিনের জন্য রোজা রাখা আবশ্যক। শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকার নামই রোজা নয়; বরং সিয়াম পালন অবস্থায় মেনে চলতে হয় বেশ কিছু নিয়মও। আজকের এই য়ার্টিকেলের মাধ্যমে আমরা রোযা ভঙ্গের কারন তথা যেসব কারনে রোজা ভেঙ্গে যায় সে সম্বন্ধে জানতে পারব।
রোজা ভঙ্গের কারণ
রোজা ভঙ্গের কারণগুলো নিচে তুলে ধরা হলোঃ-
- ইচ্ছা করে বমি করা
- বমির বেশির ভাগ মুখে আসার পর তা গিলে ফেলা
- মেয়েদের মাসিক ও সন্তান প্রসবের পর ঋতুস্রাব
- ইসলাম ত্যাগ করলে
- গ্লুকোজ বা শক্তিবর্ধক ইনজেকশন বা সেলাইন দিলে
- প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে ওষুধ বা অন্য কিছু শরীরে প্রবেশ করালে
- রোজাদারকে জোর করে কেউ কিছু খাওয়ালে
- ইফতারের সময় হয়েছে ভেবে সূর্যাস্তের আগে ইফতার করলে
- মুখ ভরে বমি করলে
- ভুলবশত কোনো কিছু খেয়ে, রোজা ভেঙে গেছে ভেবে ইচ্ছা করে আরও কিছু খেলে
- বৃষ্টির পানি মুখে পড়ার পর তা খেয়ে ফেললে
- কান বা নাক দিয়ে ওষুধ প্রবেশ করালে
- জিহ্বা দিয়ে দাঁতের ফাঁক থেকে ছোলা পরিমাণ কোনো কিছু বের করে খেয়ে ফেললে
- অল্প বমি মুখে আসার পর ইচ্ছাকৃতভাবে তা গিলে ফেললে
- রোজা স্মরণ থাকা অবস্থায় অজুতে কুলি বা নাকে পানি দেয়ার সময় ভেতরে পানি চলে গেলে। (ফাতাওয়ায়ে শামি ও ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি)
যেসব কারণে রোজা মাকরুহ হয়
নিম্নলিখিত কারণগুলোর জন্য রোজা হালকা হয়ঃ-
- বিনা ওজরে কোনো জিনিস মুখে দিয়ে চিবানো।
- গরমের কারণে বারবার কুলি করা।
- টুথ পাউডার, পেস্ট, কয়লা বা অন্য কোনো মাজন দ্বারা রোজার দিনে দাঁত পরিষ্কার করা।
- বিনা ওজরে জিহ্বা দ্বারা কোনো বস্তুর স্বাদ গ্রহণ করা। তবে বদমেজাজি স্বামীর জন্য স্ত্রীর তরকারির স্বাদ গ্রহণ করার অনুমতি আছে।
- রোজাদার অবস্থায় কারও গিবত (পরচর্চা, পরনিন্দা) করা।
- মিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।
- অশ্লীল বাক্য উচ্চারণ করা কিংবা পাঠ করা।
- ঝগড়া-বিবাদ করা।
রোজার কাজা ও কাফফারা কিভাবে আদায় করতে হয়
রোজার কাজা মানে হলো – ভেঙে যাওয়া বা ভেঙে ফেলা রোজার প্রতিবিধান হিসেবে শুধু রোজা আদায় করা। অতিরিক্ত কিছু আদায় না করা। অন্যদিকে রোজার কাফফারা হলো প্রতিবিধান হিসেবে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ আদায় করা।
রোজার কাফফারা বিষয়ে আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমরা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে বসা ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমার কী হয়েছে? সে বলল, আমি রোজা অবস্থায় আমার স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয়েছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, স্বাধীন করার মতো কোনো ক্রীতদাস তুমি মুক্ত করতে পারবে কি? সে বলল, না। তিনি বললেন, তুমি কি একাধারে দুই মাস সওম পালন করতে পারবে? সে বলল, না। এরপর তিনি বললেন, ৬০ জন মিসকিন খাওয়াতে পারবে কি? সে বলল, না। হাদিস বর্ণনাকারী বলেন, তখন নবী (সা.) থেমে গেলেন, আমরাও এ অবস্থায় ছিলাম। এ সময় নবী (সা.)-এর কাছে এক ‘আরাক’ পেশ করা হলো যাতে খেজুর ছিল। ‘আরাক’ মানে হলো ঝুড়ি। নবী (সা.) বললেন, প্রশ্নকারী কোথায়? সে বলল, আমি। তিনি বললেন, এগুলো নিয়ে দান করে দাও। তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), আমার চেয়েও বেশি অভাবগ্রস্তকে সাদকা করব? আল্লাহর শপথ, মদিনার উভয় প্রান্তের মধ্যে আমার পরিবারের চেয়ে অভাবগ্রস্ত কেউ নেই। রাসুল (সা.) হেসে উঠলেন এবং তাঁর দাঁত দেখা গেল। অতঃপর তিনি বললেন, এগুলো তোমার পরিবারকে খাওয়াও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৩৬)
বেশির ভাগ ফকিহগণ বলেন, হাদিসে বর্ণিত কাফফারার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আবশ্যক। অর্থাৎ, রোজা ভঙ্গকারী দাস মুক্ত করতে অক্ষম হলে একাধারে দুই মাস রোজা রাখবে। আর একাধারে দুই মাস রোজা রাখতে ব্যর্থ হলে ৬০ জন মিসকিনকে খাবার খাওয়াবে।
উপসংহার
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে রমজানের সময়গুলোকে কাজে লাগানোর তাওফিক দিন, আর সবাইকে নেক কর্মসমূহে ব্যস্ত রাখুন। রোজা ভঙ্গের কারণ ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো। আসসালামুআলাইকুম।