শরীর ফর্সা করার ঘরোয়া উপায়

Share on:
শরীর ফর্সা করার ঘরোয়া উপায়

আপনি কি চান আপনার ত্বক হোক উজ্জ্বল ও ফর্সা? বাজারে এতসব ক্রিম, লোশন আর সিরামের মধ্যে কীভাবে নিজের জন্য সঠিক পণ্যটি বেছে নেবেন, তা নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু জানেন কি, ঘরে বসেই কিছু সহজ উপায়ে আপনি আপনার ত্বককে ফর্সা করতে পারেন। এই আর্টিকেলে আমরা আপনাকে এমন কিছু ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানাব, যা আপনার ত্বককে স্বাস্থ্যকর এবং উজ্জ্বল করে তুলতে সাহায্য করবে। আমরা আলোচনা করব বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদানের গুণাবলি এবং তা কীভাবে আপনার ত্বকের জন্য উপকারী হতে পারে। তাই আর দেরি না করে পড়ুন এই আর্টিকেলটি এবং জেনে নিন কীভাবে আপনি ঘরে বসেই নিরাপদে এবং কার্যকরীভাবে আপনার ত্বকের যত্ন নিতে পারেন।

শরীর ফর্সা করার ১০টি ঘরোয়া উপায়

আসুন জেনে নেই শরীর ফর্সা করার ১০টি ঘরোয়া উপায় সম্পর্কেঃ-

(১) মধু ও লেবুর মিশ্রণ

আপনি কি চান আপনার ত্বক হোক উজ্জ্বল ও ফর্সা? মধু ও লেবু এই লক্ষ্যে আপনাকে সাহায্য করতে পারে! মধু ত্বককে ময়শ্চারাইজ করে এবং কোমল করে তোলে। এছাড়াও, মধুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যা ত্বকের মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে তোলে। একটি পাত্রে চার চামচ মধু ও চার চামচ লেবুর রস নিন। ভালো করে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি পরিষ্কার ত্বকে ভালোভাবে মাসাজ করে লাগান। পনেরো থেকে কুড়ি মিনিটের জন্য এটি ত্বকে রেখে দিন। গরম পানি দিয়ে ত্বক ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। সর্বোত্তম ফল পাওয়ার জন্য এই পেস্টটি সপ্তাহে তিনবার ব্যবহার করুন।

(২) টমেটো ও লেবুর মিশ্রণ

একটি কার্যকরী ফেস প্যাক তৈরি করার জন্য আপনি টমেটো ও লেবুর রস একসাথে ব্যবহার করতে পারেন। লেবুতে ভিটামিন সি রয়েছে যা ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং টমেটোর লাইকোপিন ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে। এক বা দুটি পাকা টমেটো ভালো করে ধুয়ে ব্লেন্ডারে পিষে নিন। পিষে নেওয়া টমেটোর পেস্টের সাথে দুই চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি পরিষ্কার মুখে ভালো করে লাগান। ২০ মিনিটের জন্য এই মিশ্রণটি মুখে রেখে দিন। ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার এই ফেস প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।

(৩) হলুদ ও লেবুর মিশ্রণ

হলুদ এবং লেবুর রস একসাথে ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা আরো বাড়ে। লেবুর ভিটামিন সি ত্বকের মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে তোলে। একটি ছোট পাত্রে এক চিমটি হলুদ গুঁড়ো নিন এবং তার সাথে এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। যদি আপনার ত্বক সংবেদনশীল হয়, তাহলে এই মিশ্রণে একটু পানি যোগ করতে পারেন। এই পেস্টটি পরিষ্কার মুখে ভালো করে লাগান। ১৫ মিনিটের জন্য এই পেস্টটি মুখে রেখে দিন। উষ্ণ পানি দিয়ে মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার এই ফেস প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।

(৪) অ্যালোভেরা ও বাদাম গুঁড়োর মিশ্রণ

আপনার ত্বককে স্বাস্থ্যকর এবং উজ্জ্বল করতে অ্যালোভেরা ও বাদাম গুঁড়ো দিয়ে তৈরি একটি সহজ ঘরোয়া ফেস প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। অ্যালোভেরা ত্বকের জন্য একটি চমৎকার উপাদান। এটি ত্বককে ময়শ্চারাইজ করে, জ্বালাপোড়া কমায় এবং ত্বকের রং উজ্জ্বল করে। বাদাম গুঁড়োতে ভিটামিন ই, জিঙ্ক এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থ রয়েছে যা ত্বকের কোষকে পুষ্টি জোগায় এবং ত্বককে মসৃণ করে। একটি ছোট পাত্রে অল্প পরিমাণ অ্যালোভেরা জেল নিন এবং তার সাথে এক চিমটি বাদাম গুঁড়ো মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি পরিষ্কার মুখে ভালো করে লাগান। পনেরো থেকে ত্রিশ মিনিটের জন্য এটি ত্বকে রেখে দিন। ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার এই ফেস প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।

(৫) কমলালেবু ও হলুদের মিশ্রণ

কমলালেবু ও হলুদ একসাথে ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা আরো বাড়ে। হলুদের কারকিউমিন ত্বকের রং উজ্জ্বল করে এবং দাগ কমাতে সাহায্য করে। একটি ছোট পাত্রে এক চামচ কমলালেবুর রস নিন এবং তার সাথে এক চিমটি হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি পরিষ্কার মুখে ভালো করে লাগান। এই মিশ্রণটি সারা রাতের জন্য মুখে রেখে দিন। সকালে উষ্ণ পানি দিয়ে মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। সর্বোত্তম ফল পাওয়ার জন্য এই ফেস প্যাকটি প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন।

(৬) ডিমের কুসুম দিয়ে ফেস প্যাক

ডিমের কুসুম ত্বকের জন্য একটি চমৎকার ময়শ্চারাইজার এবং পুষ্টি জোগায়। একটি ডিমের কুসুম ভালো করে ফেটিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি পরিষ্কার মুখে ভালো করে লাগান। দশ মিনিটের জন্য এই মিশ্রণটি মুখে রেখে দিন। ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার এই ফেস প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।

(৭) বেসন ও হলুদের মিশ্রণ

বেসন ও হলুদ একসাথে ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা আরো বাড়ে। হলুদের কারকিউমিন ত্বকের রং উজ্জ্বল করে এবং দাগ কমাতে সাহায্য করে। একটি ছোট পাত্রে পাঁচ চামচ বেসন নিন এবং তার সাথে এক চামচ হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি পরিষ্কার মুখে ভালো করে লাগান। কুড়ি মিনিটের জন্য এই মিশ্রণটি মুখে রেখে দিন। উষ্ণ পানি দিয়ে মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। সর্বোত্তম ফল পাওয়ার জন্য এই ফেস প্যাকটি প্রতিদিন স্নানের আগে ব্যবহার করতে পারেন।

(৮) গোলাপজল ও কাঁচা দুধের মিশ্রণ

গোলাপজল এবং কাঁচা দুধ একসাথে ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা আরো বাড়ে। কাঁচা দুধে থাকা ল্যাকটিক এসিড ত্বকের মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বককে মসৃণ করে তোলে। একটি ছোট পাত্রে সমান পরিমাণ গোলাপজল এবং কাঁচা দুধ নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি পরিষ্কার মুখে ভালো করে লাগান। এই মিশ্রণটি সারা রাতের জন্য মুখে রেখে দিন। সকালে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। সর্বোত্তম ফল পাওয়ার জন্য এই ফেস প্যাকটি দুই দিন ধরে ব্যবহার করতে পারেন।

(৯) কলা ও দুধের মিশ্রণ

কলা ও দুধ একসাথে ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা আরো বাড়ে। কলার ময়শ্চারাইজিং এবং দুধের এক্সফোলিয়েশন গুণাবলি একসাথে মিলে ত্বককে উজ্জ্বল ও কোমল করে তোলে। একটি পাকা কলা ভালো করে চটকে নিন এবং তার সাথে একটু দুধ মিশিয়ে একটি মিহি পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি পরিষ্কার মুখে ভালো করে লাগান। ১৫-২০ মিনিটের জন্য এই পেস্টটি মুখে রেখে দিন। ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার এই ফেস প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।

(১০) ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধোয়া

ডাবের পানি নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের রং উজ্জ্বল হয় এবং ত্বকের দাগ কমে যায়। ডাবের পানি ত্বককে ময়শ্চারাইজ করে এবং ত্বককে শুষ্ক হতে বাধা দেয়। ডাবের পানি ত্বকের ময়লা এবং ব্ল্যাকহেডস দূর করে। দিনে দুবার, সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। সর্বোত্তম ফল পাওয়ার জন্য প্রতিদিন ডাবের পানি ব্যবহার করতে পারেন।

উপসংহার

উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে-মধু, লেবু, কমলালেবু, ডিম, বেসন, গোলাপজল, কলা, দুধ এবং ডাবের পানি এই কাজে সহায়তা করে। এই উপাদানগুলোতে থাকা ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে পুষ্টি জোগায় এবং ত্বকের সমস্যা দূর করে। তবে, সকলের ত্বক একই রকম নয়। কোন উপাদান আপনার ত্বকের জন্য উপযোগী হবে, তা নির্ধারণ করতে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ঘরোয়া উপায়গুলি স্বাভাবিকভাবে ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলতে সাহায্য করলেও, দীর্ঘস্থায়ী এবং দৃশ্যমান ফলাফলের জন্য ধৈর্য ধরতে হবে। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা, সুষম খাদ্য গ্রহণ করা এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করাও ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আশাকরি আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা শরীর ফর্সা করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন I ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site is protected by reCAPTCHA and the Google Privacy Policy and Terms of Service apply.

Related Posts

Disclaimer: All trademarks, logos, images, and brands are property of their respective owners. If you have any opinion or request or you find any bug/issues, please Contact Us