গ্রীষ্মের দাবদাহে তৃষ্ণা নিবারণে ও শরীর ঠান্ডা রাখতে শসার জুড়ি নেই। কিন্তু শুধু তৃষ্ণা নিবারণই নয়, নানা স্বাস্থ্য উপকারিতাও সমৃদ্ধ এই সবুজ ফল। এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো শসা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। জানবো কীভাবে নিয়মিত শসা খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, এবং অতিরিক্ত শসা খাওয়ার ফলে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ শসা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
শসা খাওয়ার উপকারিতা
শসা খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিচে শশার কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলোঃ-
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: শসায় ভিটামিন এ, বি, ও সি থাকে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
২. পানিশূন্যতা দূর করে: শসায় ৯৫% পানি থাকে যা গ্রীষ্মের দাবদাহে তৃষ্ণা নিবারণে ও শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
৩. ত্বকের যত্ন: শসায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, এবং সিলিকন থাকে যা ত্বকের কোষগুলিকে পুষ্টি প্রদান করে এবং ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে তোলে।
৪. ওজন কমানো: শসায় উচ্চমাত্রায় পানি ও ফাইবার থাকে এবং রয়েছে নিম্নমাত্রার ক্যালরি যা আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
৫. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: শসায় পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফাইবার থাকে যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৬. হজমশক্তি বৃদ্ধি: শসার রয়েছে এরেপসিন নামক এনজাইম যা আমাদের হজমশক্তি বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
৭. বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ: শসার পানি আমাদের দেহের বর্জ্য এবং বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে সাহায্য করে যা আমাদের রক্তকে পরিষ্কার করে।
৮. কিডনি সুরক্ষা: শসা শরীরের ইউরিক এসিডের মাত্রা ঠিক রাখে, যা আমাদের কিডনিকে সুস্থ ও সতেজ রাখে।
৯. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: শসা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
১০. চুল ও নখের যত্ন: শসাতে বিদ্যমান খনিজ সিলিকা আমাদের চুল এবং নখকে সতেজ ও শক্তিশালী করে তোলে।
১১. চোখের যত্ন: শসা চোখের নীচের কালো দাগ দূর করতে এবং চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
১২. নানা স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধান: শসা মাথা ব্যাথা, গেটেবাত, কিডনি, লিভার, ও প্যানক্রিয়াসের সমস্যা, জরায়ু, স্তন ক্যান্সার, ত্বকের সমস্যা, দাঁত ও মাড়ির সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।
১৩. মুখের দূর্গন্ধ দূর করে: শসা মুখের দূর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।
১৪. হরমোন ভারসাম্য রক্ষা করে: শসায় অধিক পরিমাণে ফসফরাস রয়েছে যা আমাদের শরীরের হরমোনাল ব্যালান্স করতে সাহায্য করে।
১৩. শারীরিক স্বাস্থ্য বৃদ্ধি: শসায় থাকা ইলেক্ট্রোলাইট খেলোয়াড় ও শরীরচর্চা করেন এমন ব্যক্তিদের জন্য খুবই উপকারী। কসরতের পর শরীরের পানি ও খনিজ পদার্থের ঘাটতি পূরণ করে এবং পেশীর ক্লান্তি দূর করে।
অতিরিক্ত শসা খাওয়ার অপকারিতা
শসা একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। তবে, যেকোন খাবারের মতো, অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়। পরিমিত পরিমাণে শসা খেলে এর স্বাস্থ্যকর উপকারিতাগুলি উপভোগ করা যাবে। অতিরিক্ত শসা খাওয়ার অপকারিতাগুলো নিচে তুলে ধরা হলোঃ-
১. হজমে সমস্যা: শসায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। যদিও ফাইবার আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, অতিরিক্ত ফাইবার হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যার ফলে- পেট ফোলা, গ্যাস, এবং ডায়রিয়া হতে পারে।
২. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা: শসায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। যারা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ খান, তাদের জন্য অতিরিক্ত পটাশিয়াম ক্ষতিকর হতে পারে। রক্তচাপ অনেক কমে যেতে পারে এবং বিপজ্জনক অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে।
৩. শরীরে জলের ভারসাম্যহীনতা: শসায় প্রায় ৯০% জল থাকে। অতিরিক্ত শসা খেলে শরীরে অতিরিক্ত জল জমা হতে পারে। এর ফলে হাইপোনেট্রেমিয়া নামে একটি অবস্থা দেখা দিতে পারে, যার ফলে মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, এবং ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।
৪. কিডনিতে চাপ: শসায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি এবং পটাশিয়াম থাকে। যারা কিডনি রোগে ভুগছেন, তাদের জন্য অতিরিক্ত ক্যালোরি এবং পটাশিয়াম ক্ষতিকর হতে পারে। কিডনিতে চাপ সৃষ্টি হতে পারে এবং রোগ আরও জটিল হতে পারে।
৫. ওজন কমানোতে বাধা: শসা কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার হলেও, এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে জল থাকায় তা জলদি ক্ষুধার্ত করে। ফলে অল্প সময় পরপর খাবার খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়, যা ওজন কমানোর চেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
কোন সময়ে শসা খাওয়া উচিত নয়
১. রাতের বেলা: শসায় প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। তাই রাতের বেলা শসা খেলে ঘুম থেকে বারবার উঠতে হতে পারে।
২. ঠান্ডা লাগা থাকলে: শসার শীতল প্রভাব ঠান্ডা লাগার সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
৩. পেট খারাপ থাকলে: পেট খারাপ থাকলে শসা খাওয়া উচিত নয়। কারণ শসা হজমে কিছুটা সময় নেয় এবং পেটের অস্বস্তি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
৪. অস্ত্রোপচারের পর: অস্ত্রোপচারের পর কিছুদিন শসা খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ শসায় রক্ত পাতলা করার প্রভাব রয়েছে।
৫. ওষুধের সাথে: কিছু ওষুধের সাথে শসা খেলে প্রতিকুল প্রভাব পড়তে পারে। তাই ওষুধ সেবনের সময় শসা খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
উপসংহার
শসা একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর সবজি যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। নিয়মিত শসা খাওয়ার ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি, হজমশক্তি উন্নত, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ওজন কমানো, এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সহ অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়। তবে, অতিরিক্ত মাত্রায় শসা খাওয়াও কিছু অপকারিতা ডেকে আনতে পারে। সুতরাং, নিয়মিত এবং পরিমিত পরিমাণে শসা খাওয়া উচিত। এতে করে আমরা শসার সকল উপকারিতা ভোগ করতে পারবো এবং অপকারিতা এড়াতে পারবো। আপনার স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনা করে এবং কোনো সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আমাদের এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে আমাদের সাথেই থাকবেন। ধন্যবাদ।