সজিনা একটি সুপরিচিত, মূল্যবান এবং সুস্বাদু সবজি। এর ইংরেজি নাম “ড্রামস্টিক” এবং বৈজ্ঞানিক নাম “মরিঙ্গা ওলিফেরা”। পাক-ভারত উপমহাদেশে এর উৎপত্তি হলেও শীতপ্রধান দেশ ছাড়া সারা পৃথিবীতেই এই গাছ জন্মে। বারোমাসি সজিনার জাত প্রায় সারা বছর ধরে বারবার ফলন দেয়। গাছে সবসময় ফুল এবং কচি ফল দেখা যায়। বাংলাদেশে ২-৩ প্রকার সজিনা পাওয়া যায়। বসতবাড়ির জন্য সজিনা একটি আদর্শ সবজি গাছ। আজকের এই আর্টিকেলে সাজিনা পাতার উপকারিতা ও গুনাগুন সম্পর্কে আলোচনা করা হবে, চলুন তাহলে শুরু করি আজকের আলোচনা I
সজিনা পাতার গুণাগুণ :
বিজ্ঞানীরা মনে করেন সজিনা পাতা পুষ্টিগুণের এক অমূল্য ভাণ্ডার। নিরামিষভোজীরা এই পাতা থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতে পারেন। একই ওজনের সজিনা পাতায় কমলা লেবুর ৭ গুণ ভিটামিন-সি, দুধের ৪ গুণ ক্যালসিয়াম এবং দুই গুণ আমিষ, গাজরের ৪ গুণ ভিটামিন-এ, এবং কলার ৩ গুণ পটাশিয়াম বিদ্যমান। বিজ্ঞানীরা আরও বলেন, সজিনা পাতায় ৪২% আমিষ, ১২৫% ক্যালসিয়াম, ৬১% ম্যাগনেসিয়াম, ৪১% পটাশিয়াম, ৭১% লৌহ, ২৭২% ভিটামিন-এ এবং ২২% ভিটামিন-সি সহ দেহের জন্য প্রয়োজনীয় বহু পুষ্টি উপাদান থাকে।
সজিনার ঔষধি গুণাগুণ
আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে, সজিনা গাছ ৩০০ রকমের রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে। আধুনিক বিজ্ঞানও এ ধারণাকে সমর্থন করে। সজিনার কচি পাতা সবজি হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। সজিনার বাকল, শিকড়, ফুল, ফল, পাতা, বীজ এমনকি এর আঠাতেও ঔষধিগুণ আছে।
- শরীর ব্যথা: শরীরের কোনো স্থানে ব্যথা হলে বা ফুলে গেলে সজিনার শিকড়ের প্রলেপ দিলে ব্যথা ও ফোলা সেরে যায়।
- কান ব্যথা: সজিনার শিকড়ের রস কানে দিলে কানের ব্যথা সেরে যায়।
- মাথা ব্যথা: সজিনার আঠা দুধের সাথে খেলে মাথা ব্যথা সেরে যায়। আঠা কপালে মালিশ করলে মাথা ব্যথা সেরে যায়।
- ফোঁড়া সারায়: সজিনার আঠার প্রলেপ দিলে ফোঁড়া সেরে যায়।
- মূত্রপাথরি ও হাঁপানি: সজিনা ফুলের রস দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে মূত্রপাথরি দূর হয়। ফুলের রস হাঁপানি রোগের বিশেষ উপকারী।
- গ্যাস থেকে রক্ষা: সজিনা পাতার রসের সাথে লবণ মিশিয়ে খেতে দিলে বাচ্চাদের পেট জমা গ্যাস দূর হয়।
- কুকুরের কামড়ে: সজিনা পাতা পেষণ করে তাতে রসুন, হলুদ, লবণ ও গোলমরিচ মিশিয়ে সেবন করলে কুকুরের বিষ ধ্বংস হয়।
- জ্বর ও সর্দি: পাতার শাক খেলে যন্ত্রণাধায়ক জ্বর ও সর্দি দূর হয়।
- বহুমূত্র রোগ: সজিনা পাতার রসে বহুমূত্র রোগ সারে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য ও দৃষ্টিশক্তি: সজিনার ফুল কোষ্ঠকাঠিন্য দোষ দূর করে এবং দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে।
- গেঁটে বাত: সজিনার ফল নিয়মিত রান্না করে খেলে গেঁটে বাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
- ক্রিমিনাশক ও টিটেনাস: সজিনার কচি ফল ক্রিমিনাশক, লিভার ও প্লীহাদোষ নিবারক, প্যারালাইসিস ও টিটেনাস রোগে হিতকর।
- অবশতা, সায়াটিকা: সজিনার বীজের তেল মালিশ করলে বিভিন্ন বাত বেদনা, অবসতা, সায়াটিকা, বোধহীনতা ও চর্মরোগ দূর হয়।(আরো অন্যান্য গুনাগুন নিচে উল্লেখ করা হলো)
- পাতার রস হৃদরোগ চিকিৎসায় এবং রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধিতে ব্যবহার হয়।
- পোকার কামড়ে এন্টিসেপ্টিক হিসেবে সজিনার রস ব্যবহার করা হয়।
- ক্ষতস্থান সারার জন্য সজিনা পাতার পেস্ট উপকারী।
- সজিনা শরীরের প্রতিরোধক ব্যবস্থা শক্তিশালী করে। শরীর থেকে বিষাক্ত দ্রব্য, ভারি ধাতু অপসারণ এবং শরীরে রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপি নিতে সহায়তা করে।
- ইন্টেস্টাইন ও প্রোস্টেট সংক্রমণ, সজিনা বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে।
- শ্বাসকষ্ঠ, মাথা ধরা, মাইগ্রেন, আর্থাইটিস এবং চুলপড়া রোগের চিকিৎসায় ও সজিনা কার্যকর ভূমিকা রাখে।
- সজিনা ফুল দুধের সাথে রান্না করে নিয়মিত খেলে কামশক্তির বৃদ্ধি ঘটে। এর চাটনি হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।
সজিনা পাতা খাওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি
১. সবজি হিসেবে
- সজিনা পাতা ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।
- পাতাগুলোকে পাতলা করে কেটে নিন।
- পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচা মরিচ, হলুদ, লবণ ও তেল দিয়ে ভেজে নিন।
- ঝোল দিয়ে রান্না করে তরকারি হিসেবে খেতে পারেন।
- ডালের সাথে সজিনা পাতা রান্না করে খেতে পারেন।
২. ভর্তা হিসেবে
- সজিনা পাতা ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।
- পাতাগুলোকে সেদ্ধ করে নিন।
- পানি ঝরিয়ে পাতাগুলোকে হালকা করে চটকে নিন।
- পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচা মরিচ, হলুদ, লবণ ও তেল দিয়ে ভেজে নিন।
- ভাজা পাতাগুলোকে ঠান্ডা করে মিক্সিতে ব্লেন্ড করে নিন।
- তেল, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, হলুদ, লবণ দিয়ে ভেজে ভর্তা তৈরি করুন।
৩. শুকনো গুঁড়ো হিসেবে
- সজিনা পাতা ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।
- রোদে শুকিয়ে নিন।
- শুকনো পাতাগুলোকে গুঁড়ো করে নিন।
- দুধ, জল, স্যুপ, ডাল, তরকারি, ভাতের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
৪. জুস হিসেবে
- সজিনা পাতা ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।
- পাতাগুলোকে মিক্সিতে ব্লেন্ড করে নিন।
- পানি, মধু, লেবুর রস মিশিয়ে জুস তৈরি করুন।
উপসংহার
াশাকরছি আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে সজিনা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করে বন্ধুদের মাঝে ছড়িয়ে দিবেন। ধন্যবাদ।