হিজরী চন্দ্রবর্ষের দ্বিতীয় মাস হল সফর। ‘সফর’ শব্দের অর্থ ‘যাত্রা’। আরবের প্রাচীনকালে, এই মাসে লোকেরা যুদ্ধ ও বাণিজ্যের জন্য দূর-দূরান্তে ভ্রমণ করত। ধারণা করা হয়, হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) মদিনায় হিজরতের সময় এই মাসেই পৌঁছেছিলেন। এছাড়াও, সফর মাসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল, যেমন – বদর যুদ্ধ, খন্দক যুদ্ধ, ও তায়েফ অভিযান। ইসলামে সফর মাসকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মাস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই মাসে নেক আমল করার মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা যায়। এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব সফর মাসের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে।
সফর মাসের ফজিলত ও গুরুত্ব
সফর মাসের কিছু ফজিলত ও গুরুত্ব নিচে বর্ণনা করা হলো:-
- ধর্মীয় গুরুত্ব:
- হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর হিজরত এই মাসেই ঘটেছিল।
- বদর যুদ্ধ, খন্দক যুদ্ধ, ও তায়েফ অভিযান সফর মাসেই সংঘটিত হয়েছিল।
- আইয়ামে বিজ (১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ) এই মাসেই পড়ে।
- আধ্যাত্মিক গুরুত্ব:
- সফর মাস চিন্তাভাবনা ও আত্ম-অনুসন্ধানের জন্য একটি উত্তম সময়।
- এই মাসে নেক আমল ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়।
- পাপ থেকে তওবা করে নতুন করে জীবন শুরু করার জন্য এটি একটি উপযুক্ত সময়।
- সামাজিক গুরুত্ব:
- সফর মাসে সাহায্য-সহানুভূতি ও দান-সদকা বৃদ্ধি করা উচিত।
- সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত।
- পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক উন্নত করার জন্য এটি একটি উত্তম সময়।
সফর মাসের আমল
প্রতিটি চন্দ্রমাস আল্লাহর অনুগ্রহ ও বরকতের এক নতুন অধ্যায়। এই মাসগুলোতে নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সুযোগ বৃদ্ধি পায়। সফর মাসও এর ব্যতিক্রম নয়।
সফর মাসে পালনযোগ্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল নিচে তুলে ধরা হলোঃ-
- আইয়ামে বিজের রোজা: সফর মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে আইয়ামে বিজ পালন করা। এই রোজাগুলি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
- নিয়মিত রোজা: প্রতি মাসে তিনটি রোজা পালনের কথা হাদিসে এসেছে। সফর মাসেও এই রোজাগুলি পালন করা যেতে পারে।
- সপ্তাহে দুইদিন রোজা: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সপ্তাহে দুইদিন (সোমবার ও বৃহস্পতিবার) রোজা রাখতেন। সফর মাসেও এই দুইদিন রোজা রাখার অভ্যাস করা যেতে পারে।
- নফল নামাজ, দু’আ ও জিকির: নফল নামাজ, দু’আ ও জিকির বৃদ্ধি করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা।
- কোরআন তিলাওয়াত ও দ্বীনি জ্ঞান অর্জন: কোরআন তিলাওয়াত ও দ্বীনি জ্ঞান অর্জনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া।
- সদকা ও খয়রাত: সদকা ও খয়রাত করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।
- নতুন চাঁদ দেখার আমল: নতুন মাসের বরকতের চাঁদ দেখে দোয়া পাঠ করা।
ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতে মুয়াক্কাদার যথাযথ পালন:
সর্বোপরি, ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতে মুয়াক্কাদার যথাযথ পালনের পাশাপাশি নফল আমলের প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত। নিয়মিতভাবে নেক আমল করার মাধ্যমে আমরা আমাদের আধ্যাত্মিক জীবন সমৃদ্ধ করতে পারি এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করতে পারি।
কোনো সময় বা মাসের সাথে মঙ্গল বা অমঙ্গলের সম্পর্ক নেই
ইসলামের আগমনের পূর্বে, আরবের জাহেলি সমাজে বিভিন্ন সময় ও মাসকে নিয়ে নানা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার প্রচলিত ছিল। তার মধ্যে একটি ছিল সফর মাসকে অশুভ মনে করা। ইসলাম এই ধারণাকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করে। আল্লাহর দৃষ্টিতে প্রতিটি দিন ও মাসই সমানভাবে পবিত্র ও ফজিলতপূর্ণ। কোনও নির্দিষ্ট সময় বা মাসকে মঙ্গল বা অমঙ্গলের সাথে যুক্ত করা ভুল ও অযৌক্তিক। ইসলামে কল্যাণ ও অকল্যাণ নির্ভর করে মানুষের বিশ্বাস ও কর্মের উপর।
এই বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্পষ্টভাবে বলেছেন, “রোগে সংক্রমিত হওয়া বলতে কিছুই নেই, কোনো কিছু অশুভ নয়। প্যাঁচার মধ্যে কুলক্ষণ নেই এবং সফর মাসেও কোনো অশুভ কিছু নেই…।” (বুখারি, হাদিস : ৫৭৬৯)
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা বলল, তোমাদের কর্ম দোষের দুর্ভাগ্য তোমাদের সঙ্গেই আছে।’- (সূরা ইয়াসিন : আয়াত ১৯) অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক ব্যক্তির কল্যাণ ও অকল্যাণের পরোয়ানা আমি তার গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছি।-(সূরা বনী ইসরাঈল, ১৩)
অতএব কোনও বিশেষ সময়ের সঙ্গে অমঙ্গল বা অকল্যাণের সম্পর্ক নেই। তাই আল্লাহ তায়ালার রহমত ও বরকত পেতে হলে এ মাসেও বেশি বেশি ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত ইবাদতের পাশাপাশি নফল ইবাদতে মশগুল থাকা উচিত।
উপসংহার
আল্লাহ সৃষ্ট সকল দিন-রাত-মাসের ফজিলত অত্যাধিক। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সর্বদা হাদিসের নির্দেশিকা অনুসারে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমাদের এই পবিত্র মাসের সকল আমল ও ইবাদত কবুল করুন এবং আমাদেরকে জান্নাতের উত্তম বস্তু দান করুন। আমিন। আমাদের এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে আমাদের সাথেই থাকবেন। ধন্যবাদ।