সাইয়েদুল ইস্তেগফার (বাংলা উচ্চারণ সহ)

Share on:
সাইয়েদুল ইস্তেগফার

আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দাতা। তিনি সবসময়ই আমাদের ক্ষমা লাভের দুয়ার রাস্তা খোলা রেখেছেন। আর এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ও ফজিলতপূর্ণ আমল হলো সাইয়েদুল ইস্তেগফার। এই আর্টিকেলে আজকে আমরা সাইয়েদুল ইস্তেগফারের গুরুত্ব, এর অর্থ, পাঠ করার নিয়ম এবং এর অসাধারণ ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করি, এই লেখাটি আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দেবে এবং নিয়মিত সাইয়েদুল ইস্তেগফার পাঠের প্রেরণা জাগিয়ে তুলবে।

সাইয়েদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ

اَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّىْ لآ إِلهَ إلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِىْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّمَا صَنَعْتُ، أبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ وَأَبُوْءُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْلِىْ، فَإِنَّهُ لاَيَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা‘তু। আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হ’তে তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই’। 

সাইয়েদুল ইস্তেগফারের গুরুত্ব

মানুষ হিসেবে আমরা সবাই কখনো না কখনো ভুল করে ফেলি। ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃতভাবে আমরা আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করি, গুনাহের পথে পা বাড়িয়ে ফেলি। কিন্তু ইসলাম আমাদের আশাহীন করে। আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল, তিনি তাঁর বান্দাদের ক্ষমা লাভের পথ সর্বদা উন্মুক্ত রেখেছেন। আর এই ক্ষমার পথের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো সাইয়েদুল ইস্তিগফার।

সাইয়েদুল ইস্তেগফারের গুরুত্বসমুহ নিচে দেয়া হলোঃ-

  • আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ: আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের ক্ষমা লাভের আগ্রহ রাখেন। সাইয়েদুল ইস্তিগফারের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে আন্তরিক ক্ষমা প্রার্থনা করি, যা তাঁকে সন্তুষ্ট করে।
  • গুনাহের মাফ: সাইয়েদুল ইস্তিগফার আমাদের গুনাহের কালো দাগ মুছে ফেলে দেয়। নিয়মিত এই দোয়া পাঠের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, আর তিনি তাঁর অশেষ ক্ষমতা দ্বারা আমাদের গুনাহ মাফ করে দেন।
  • মনের শান্তি: গুনাহের বোঝা আমাদের মনে অশান্তি ও অবসাদ তৈরি করে। সাইয়েদুল ইস্তিগফার পাঠের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, যা আমাদের মনকে শান্তি ও স্বস্তি দেয়।
  • রিজক বৃদ্ধি: আল্লাহ তাআলা তাঁর রহমতে আমাদের রিজক দান করেন। সাইয়েদুল ইস্তিগফার পাঠের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি এবং আরও বরকতের আশা করি।
  • দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা: নিয়মিত সাইয়েদুল ইস্তিগফার পাঠের মাধ্যমে আমরা দুনিয়াতেও সফলতা লাভ করি এবং আখেরাতে মুক্তি লাভের সম্মান বাড়ে।

সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়ার সর্বোত্তম সময়

ক্ষমা প্রার্থনার কোনো বাধ্যতামূলক সময় নেই। যেকোনো সময়, যখনই আপনি পাপের জন্য অনুতপ্ত বোধ করবেন, তখনই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। তবে বেশিরভাগ ইসলামিক স্কলারগন মনে করেন সাইয়েদুল ইস্তিগফার সকালে ও রাতে এই দুই সময় পড়া সবচেয়ে উত্তম। কিন্তু যদি দিনে অনেক বার পড়েন, তাহলে সেটাও খুব ভালো।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

যে ব্যক্তি এ ইস্তেগফার সকালে পড়ে আর সন্ধ্যার আগে মারা যায় কিংবা সন্ধ্যায় পড়ে সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, তবে সে জান্নাতে যাবে।’ (বুখারি)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে সাইয়েদুল ইস্তিগফার সকালে ও রাতে দুবার পাঠ করা উচিত।

সাইয়েদুল ইস্তিগফার পাঠের জন্য আরও কিছু উত্তম সময় হল:

  • নামাজের পর: প্রতিটি নামাজের পর সাইয়েদুল ইস্তিগফার পাঠ করা উত্তম।
  • সুজুদের সময়: সুজুদের অবস্থায় আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা বিশেষভাবে ফলপ্রসূ।
  • দুঃখের সময়: যখন আপনি দুঃখ বা বিপদে থাকবেন, তখন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।
  • সফরের সময়: সফরের সময় নিয়মিত সাইয়েদুল ইস্তিগফার পাঠ করা উত্তম।

সাইয়েদুল ইস্তিগফারের অসাধারণ ফজিলত

সাইয়েদুল ইস্তিগফার, যা ক্ষমা প্রার্থনার একটি নির্দিষ্ট দোয়া, তার অসাধারণ ফজিলত সম্পর্কে আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ) হাদিসে বর্ণনা করেছেন।

কিছু উল্লেখযোগ্য ফজিলতের মধ্যে রয়েছে:

  • জান্নাতের দ্বার উন্মুক্ত করে: রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যদি কেউ সকাল-সন্ধ্যায় বিশ্বাসের সাথে সাইয়েদুল ইস্তেগফার পাঠ করে, সে যদি ওই দিন রাত্রে বা দিবসে ইন্তেকাল করে, তাহলে সে জান্নাতি হবে।” (বুখারি)
  • ক্ষমা লাভের মাধ্যম: সাইয়েদুল ইস্তিগফার আমাদের গুনাহের ক্ষমা লাভের জন্য একটি শক্তিশালী মাধ্যম।
  • রিজক বৃদ্ধি: নিয়মিত সাইয়েদুল ইস্তিগফার পাঠের মাধ্যমে রিজক বৃদ্ধির আশা করা যায়।
  • মনের শান্তি: সাইয়েদুল ইস্তিগফার মনকে শান্তি ও প্রশান্তি দান করে।
  • শয়তানের হাত থেকে রক্ষা: সাইয়েদুল ইস্তিগফার শয়তানের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে।
  • মৃত্যুর সময় সহায়তা: মৃত্যুর সময় সাইয়েদুল ইস্তিগফার পাঠকারীকে আল্লাহ সাহায্য করবেন।
  • আখেরাতের সফলতা: নিয়মিত সাইয়েদুল ইস্তিগফার পাঠের মাধ্যমে আখেরাতে সফলতা লাভের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

উপরোক্ত ফজিলত ছাড়াও, সাইয়েদুল ইস্তিগফারের আরও অনেক গুণ রয়েছে। নিয়মিত সাইয়েদুল ইস্তিগফার পাঠের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করতে পারি এবং আমাদের জীবনে বরকত ও সমৃদ্ধি আনতে পারি।

উপসংহার

মহান আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে নিয়মিতভাবে তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার তৌফিক দান করুন। তিনি যেন তাদেরকে কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশিত নীতি অনুসারে প্রচুর পরিমাণে তাওবাহ ও ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করার তৌফিক দান করেন। দুনিয়া ও পরকালের সকল কল্যাণ লাভের তৌফিক তাদেরকে দান করেন। আমিন। আমাদের এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে আমাদের সাথেই থাকবেন। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site is protected by reCAPTCHA and the Google Privacy Policy and Terms of Service apply.

Related Posts

Disclaimer: All trademarks, logos, images, and brands are property of their respective owners. If you have any opinion or request or you find any bug/issues, please Contact Us