আল-কোরআন, মহান আল্লাহর কাছ থেকে অবতীর্ণ পবিত্র বার্তা, যা আমাদের জীবনকে সুন্দর ও সুখময় পথে পরিচালিত করে। এর মধ্যে রয়েছে অগণিত সূরা, যার প্রত্যেকটিই ধারণ করে অপরিসীম জ্ঞান ও হেদায়াত। আজকের আলোচনার বিষয় হল সূরা আর-রহমান, যা “কোরআনের মুকুট” নামেও পরিচিত। এই সূরাটি ঐশ্বরিক রহমত ও বরকতের এক অমূল্য ভাণ্ডার, যা তেলাওয়াতকারীর জীবনে অফুরন্ত সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনে। এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব সূরা আর রহমানের ফজিলত সম্পর্কে। জানব কীভাবে এই সূরা তেলাওয়াত আমাদের জীবনকে করে তোলে সুন্দর ও সার্থক।
আরও পড়ুনঃ সুরা ওয়াকিয়ার ফজিলত
সুরা আর-রহমানের শানে নুযুল
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নবুয়াত লাভ করেন, তখন মক্কার কাফেররা ইসলাম সম্পর্কে কৌতূহলী হয়ে ওঠে। তারা আল্লাহ নামটির সাথে পরিচিত ছিল, কিন্তু আল্লাহর অন্যান্য নাম, যেমন “রাহমান”, সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল। তারা যেসব মূর্তির পূজা করত তারা সকলের একাধিক নাম ছিল। এই নতুন নাম “রাহমান” শুনে তারা বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করতে থাকে, “ওয়া মা রাহমান?”, যার অর্থ “রাহমান কে?”। এই প্রশ্নের উত্তর দিতে এবং “রাহমান” নামের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করার জন্যই সূরা আর-রহমান অবতীর্ণ হয়।
সুরা আর-রহমানের সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তু
সুরার বিষয়বস্তু:
সূরা আর-রহমান কোরআনের ৫৫তম সূরা। এতে মোট ৭৮টি আয়াত রয়েছে। এই সূরার নামকরণ করা হয়েছে আল্লাহর অন্যতম গুণবাচক নাম “রাহমান” এর উপর ভিত্তি করে। এই সূরায় মূলত পাঁচটি বিষয়বস্তুর উপর আলোকপাত করা হয়েছে:
- কোরআন: সূরার শুরুতেই কোরআনের গুরুত্ব ও মহিমা তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ বলেছেন, তিনি কোরআনকে শিক্ষাদানের জন্য অবতীর্ণ করেছেন।
- আল্লাহর সৃষ্টি: এরপর আল্লাহর সৃষ্টির বিস্ময়করতা বর্ণনা করা হয়েছে। চাঁদ, সূর্য, নক্ষত্র, পৃথিবী, গাছপালা, সকল সৃষ্টিই আল্লাহর অপার ক্ষমতার নিদর্শন।
- বিচার দিবস ও জাহান্নাম: তৃতীয় অংশে বিচার দিবসের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য জাহান্নাম তৈরি করেছেন।
- জান্নাত: চতুর্থ অংশে জান্নাতের অপরিসীম সুখ-সমৃদ্ধির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
- আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা: সূরার শেষভাগে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই সুরার বৈশিষ্ট্য:
- জিন ও মানব উভয়ের জন্য: এই সূরায় আল্লাহ জিন ও মানব উভয়কেই সম্বোধন করেছেন।
- পুনরাবৃত্তি: সূরায় “ফাবি আইয়ি আলা ইরাব্বিকুমা তুকাজ্জিবান” (তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?) এই আয়াতটি বারবার উল্লেখ করা হয়েছে।
- সহজবোধ্য ভাষা: সূরা আর-রহমানের ভাষা অত্যন্ত সহজবোধ্য এবং মুখস্থ করাও সহজ।
ফজরের পর সূরা আর রহমান পড়ার ফজিলত
ফজরের পর সূরা ইয়াসিন এবং সূরা আর-রহমান পাঠ করা সুন্নত। তবে, হাদিসে এই দুই সূরা ফজরের পর পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন ফজিলত বর্ণিত নেই।
তবে, কিছু সাধারণ ফজিলত রয়েছে যেগুলো যেকোন সময় সূরা আর-রহমান পাঠ করলে পাওয়া যায়।সেগুলো হল:
- আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ: সূরা আর-রহমানে আল্লাহর অগণিত নেয়ামত ও রহমতের কথা বর্ণিত হয়েছে। তাই, এই সূরা পাঠের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি।
- জান্নাতের স্মরণ: সূরা আর-রহমানে জান্নাতের অপার সুন্দর্য ও সুখ-সমৃদ্ধির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এই সূরা পাঠের মাধ্যমে আমরা জান্নাতের প্রতি আগ্রহী হতে পারি এবং জান্নাত লাভের জন্য আমল করতে পারি।
- পাপ থেকে বিরত থাকা: সূরা আর-রহমানে জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তির কথাও বর্ণিত হয়েছে। এই সূরা পাঠের মাধ্যমে আমরা জাহান্নামের ভয় পেতে পারি এবং পাপ থেকে বিরত থাকতে পারি।
- মানসিক প্রশান্তি: সূরা আর-রহমানের মধুর তিলাওয়াত মনকে প্রশান্তি দেয় এবং চিন্তা-ভাবনা পরিষ্কার করে।
উপসংহার
নিয়মিত সূরা আর-রহমান তেলাওয়াতের মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনকে করে তুলতে পারি সুন্দর ও সুখময়। এই সূরার মধুর তিলাওয়াত আমাদের মনকে করে তোলে পবিত্র ও বিশুদ্ধ। আসুন, আমরা সকলেই নিয়মিত সূরা আর-রহমান তেলাওয়াত করি এবং এর অফুরন্ত ফজিলত লাভ করি। এই সূরা তেলাওয়াতের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করতে পারি এবং জীবনের সকল সমস্যার সমাধান পেতে পারি। আমাদের এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে আমাদের সাথেই থাকবেন। ধন্যবাদ।