কুরআন মজীদের ৩৬তম সূরা, সূরা ইয়াসিন, যা ‘কুরআনের হৃদয়’ নামে পরিচিত, মুসলমানদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর বহু হাদিসে এর অপরিসীম ফজিলত ও বরকতের কথা বর্ণিত হয়েছে। এই সূরা তেলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ, পাপক্ষালন, দুনিয়া ও পরকালে সফলতা লাভ করা সম্ভব। এই আর্টিকেলে আমরা সূরা ইয়াসিনের নামকরণ, এর ফজিলত ও বরকত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। পাশাপাশি, নিয়মিত তেলাওয়াতের নিয়ম, সময় ও বিশেষ আমলের কথাও তুলে ধরা হবে।
সুরা ইয়াসিনের বিষয়বস্তু
- ঈমান: সুরাটি আল্লাহর একত্ববাদ, পরকালের জীবন ও মৃত্যু পরবর্তী বিচারের বিষয়ে বর্ণনা করে ঈমান শক্তিশালী করে।
- হুকুম ও নির্দেশ: সুরায় আল্লাহর নির্দেশাবলী ও বিধি-বিধান উল্লেখ করা হয়েছে, যা মানবজীবনে সঠিক পথনির্দেশ দেয়।
- কাহিনী: সুরাটিতে মুসা (আঃ) ও ফিরআউনের গল্প,সাহাবীদের ঈমানের পরীক্ষা ও আখেরাতের বিবরণ সহ বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। এই কাহিনীগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা যায়।
- দোয়া ও রহমতের বার্তা: সুরাটিতে আল্লাহর রহমতের প্রতি আশা রাখতে ও তাঁর কাছে দোয়া করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সুরা ইয়াসিন এর ফজিলত কি কি
কোরআনের অন্যান্য আয়াত তিলাওয়াত করলে প্রতিটি অক্ষরে সওয়াব পাওয়া যায়। এই সুরা তিলাওয়াতে রয়েছে অসাধারণ ফজিলত। হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত এসব ফজিলত।
তিরমিজি শরীফের একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
“প্রত্যেক বস্তুর একটি হৃদয় রয়েছে, আর কোরআনের হৃদয় হচ্ছে ‘সুরা ইয়াসিন’। যে ব্যক্তি ‘ইয়াসিন’ পড়বে আল্লাহ তার আমলনামায় দশবার পূর্ণ কোরআন পড়ার নেকি দান করবেন। (তিরমিজি ২৮৮৭)”
হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাতে সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করবে, আল্লাহ তার সেই রাতের সকল গোনাহ মাফ করে দেবেন।” (দারেমি)
হজরত ইবনে ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করবে, আল্লাহ তাআলা তার অতীতের সকল গোনাহ মাফ করে দেবেন।” (বায়হাকি, আবু দাউদ)
ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) এ প্রসঙ্গে বলেছেন:
“সূরা ইয়াসীনকে কুরআনের হৃদয় বলা হয় কারণ এই সূরায় কেয়ামত ও হাশর-নশর বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও অলঙ্কারসহকারে বর্ণিত হয়েছে।”
ইয়াহইয়া ইবনে কাসির রহ. বলেন:
“যে ব্যক্তি সকালে (বাদ ফজর) সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুখে-স্বস্তিতে থাকবে। যে সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত শান্তিতে থাকবে।” (মাজহারি)
সুরা ইয়াসিন একবার পাঠে ১০ বার কুরআন খতমের সওয়াব কি সত্যি?
সুরা ইয়াসিন একবার পাঠে ১০ বার কুরআন খতমের সওয়াব পাওয়া যায়? এই প্রশ্নের উত্তর দুটি ভাগে দেওয়া যায়:
১. হাদিসের বিষয়:
- সুরা ইয়াসিন একবার পাঠে ১০ বার কুরআন খতমের সওয়াব পাওয়া যায় – এই বক্তব্যটি সমর্থন করে এমন একটি হাদিস সুনানে তিরমিজিতে বর্ণিত হয়েছে।
- তবে, হাদিস বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হাদিসের সনদ দুর্বল।
২. আমলের বিধান:
- দুর্বল হাদিস হলেও, নেক আমলের জন্য উৎসাহিত করা হয়।
- সুতরাং, সুরা ইয়াসিন নিয়মিত তেলাওয়াত করা একটি উত্তম আমল।
- ১০ বার পাঠ করলে আরও বেশি সওয়াব পাওয়ার আশা করা যায়।
- তবে, কেবল সওয়াবের আশায় নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও কুরআনের বার্তা উপলব্ধির জন্য তেলাওয়াত করা উচিত।
মহান মুহাদ্দিসগণের মতামত:
- দুর্বল হাদিসের উপরও আমল করা যায়, তবে সাবধানতার সাথে।
- কেবল সওয়াবের আশায় নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নেক আমলের জন্য আমল করা উচিত।
উপসংহার
সূরা ইয়াসিন কেবল একটি সূরা নয়, এটি আল্লাহর রহমত ও বরকতের এক অমূল্য ভাণ্ডার। নিয়মিত তেলাওয়াতের মাধ্যমে আমরা দুনিয়া ও পরকালে সফলতা লাভ করতে পারি। এই সূরাটি তেলাওয়াতের অনেক নিয়ম ও সময় আছে। রমজান মাসে, জুমার দিন, মৃত্যুর সময় ইত্যাদি সময়ে এর তেলাওয়াতের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। সূরা ইয়াসিনের ফজিলত ও বরকত সম্পর্কে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত এবং নিয়মিত এটি তেলাওয়াতের চেষ্টা করা উচিত। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য সহায়ক হয়েছে এবং সূরা ইয়াসিনের প্রতি আপনাদের আগ্রহ ও ঈমান আরও দৃঢ় করতে সাহায্য করেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন I ধন্যবাদ।