সুরা ওয়াকিয়ার ফজিলত

Share on:
সুরা ওয়াকিয়ার ফজিলত

সূরা ওয়াকিয়া (সূরা ৫৬) কুরআনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সূরা যা কিয়ামতের ভয়াবহতা ও আল্লাহর রহমতের বার্তা বহন করে। মাত্র ৯৬ টি আয়াত সমৃদ্ধ এই সূরাটি তিলাওয়াত ও অনুশীলনের অপরিসীম ফজিলতের জন্য বিখ্যাত। এই আর্টিকেলে আমরা সূরা ওয়াকিয়ার নানা গুণাবলী, নিয়মিত তিলাওয়াতের ফজিলত এবং এর বিশেষ অর্থ ও ব্যাখ্যা সম্পর্কে আলোচনা করবো। আশা করা যায় আলোচনার মাধ্যমে পাঠকগণ সূরা ওয়াকিয়ার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও আগ্রহ অনুভব করবেন এবং তা তাদের নিয়মিত আমলে পরিণত করবেন।

আরও পড়ুনঃ Sura Mulk (সুরা মুলক বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ)

সুরা ওয়াকিয়ার গুরুত্ব ও তাৎপর্য

সুরা ওয়াকিয়ার গুরুত্ব-তাৎপর্য সম্পর্কে ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে একটি বর্ণনা আছে। তিনি বলেন, একদিন আবু বকর (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), আপনি তো বৃদ্ধ হয়ে পড়লেন! তখন রাসুল (সা.) বলেন, হ্যাঁ, আমাকে সুরা হুদ, সুরা ওয়াকিয়া, সুরা মুরসালাত, সুরা আম্মা ইয়্যাতাসা আলুন এবং সুরা ইয়াশ শামসু কুউয়িরাত বৃদ্ধ করে ফেলেছে। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩২৯৭)

সূরা ওয়াকিয়ার সারসংক্ষেপ

সূরা ওয়াক্বিয়াহ কিয়ামতের ভয়াবহতা ও আল্লাহর রহমতের বার্তা বহন করে। এই সূরার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি:

কিয়ামতের ভাগ্য:

  • মানুষ কিয়ামতে তিন ভাগে বিভক্ত হবে: সৌভাগ্যবান, দুর্ভাগা এবং ভালো কাজে অগ্রগামী।
  • ভালো কাজে অগ্রগামীরা অনন্ত পুরস্কার ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে।
  • সৌভাগ্যবানদের পুরস্কার দেওয়া হবে।
  • দুর্ভাগাদের পরকালে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।

কিয়ামতের ভয়াবহতা:

  • পৃথিবীতে ভূমিকম্প হবে, পাহাড় তুলা হয়ে উড়ে যাবে।
  • সকলের বিচার হবে, কাউকে কাউকে নীচে নামানো হবে, কাউকে কাউকে ওপরে ওঠানো হবে।
  • পৃথিবী প্রবল ঝাঁকুনিতে কাঁপবে, পাহাড় ভেঙেচুরে ধুলোয় গুঁড়ো হয়ে যাবে।

আল্লাহর মহত্ত্ব:

  • সূরা ওয়াক্বিয়ায় আল্লাহর অস্তিত্ব, একত্ব ও অসীম ক্ষমতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
  • আল্লাহ আমাদের যেসব রহমত দান করেছেন, তার কৃতজ্ঞতা জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কোরআনের গুরুত্ব:

  • কোরআন আল্লাহর মর্যাদাবান কিতাব, এটিকে প্রত্যাখ্যান করা বোকামি।
  • পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ কোরআন স্পর্শ করবে না।
  • ওজু ছাড়া কোরআন স্পর্শ করা উচিত নয়।

সূরা ওয়াকিয়ার ফজিলত

হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, প্রতি রাতে যিনি সূরা ওয়াকিয়া তিলাওয়াত করবেন, তার জীবনে দারিদ্র্যের স্পর্শ আসবে না। এই বর্ণনার ভিত্তিতে, সূরা ওয়াকিয়াকে ‘সুরা গনি’ বা ধন লাভের সূরাও বলা হয়।

সূরা ওয়াকিয়া নিয়মিত তিলাওয়াতের মাধ্যমে লাভ করা সম্ভাব্য ফজিলতগুলো হল:

  • রিযিক বৃদ্ধি: এই সূরা তিলাওয়াতের মাধ্যমে রিযিক বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।
  • আল্লাহর রহমত লাভ: সূরা ওয়াক্বিয়াহতে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাতের বার্তা রয়েছে। নিয়মিত তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভের আশা করা যায়।
  • মানসিক শান্তি: এই সূরা তিলাওয়াতের মাধ্যমে মন প্রশান্ত ও শান্তিময় হয়।
  • আখেরাতের জন্য প্রস্তুতি: সূরা ওয়াক্বিয়াহতে পরকাল ও আখেরাত সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে। নিয়মিত তিলাওয়াতের মাধ্যমে পরকালের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব।

প্রতিরাতে সূরা ওয়াকিয়া পড়া শরিয়তসম্মত কি না

প্রতিরাতে সূরা ওয়াকিয়া পড়ার ব্যাপারে একটি হাদিস প্রচলিত রয়েছে। হাদিসটিতে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি প্রতিরাতে সূরা ওয়াকিয়া তিলাওয়াত করবে, তার রিযিকের বন্দোবস্ত আল্লাহ করবেন এবং তার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।” (সনদ দুর্বল)

এই হাদিসটির সনদ দুর্বল বলে বিবেচিত হয়। অতএব, হাদিসটির উপর ভিত্তি করে প্রতিরাতে সূরা ওয়াকিয়া পড়াকে বাধ্যতামূলক বলা যাবে না। তবে, কোরআনের যেকোনো সূরা তিলাওয়াতের ফলে সওয়াব অর্জিত হয়। সুতরাং, ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী কেউ যদি প্রতিরাতে সূরা ওয়াকিয়া তিলাওয়াত করতে চান, তাহলে তা অবশ্যই শরিয়তসম্মত।

কিছু বিষয় মনে রাখা জরুরি:

  • নিয়মিত আমল না করা: হাদিস দুর্বল হওয়ায়, এটাকে নিয়মিত আমল হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয়।
  • নবীর নামে ভুল ব্যাখ্যা না করা: হাদিসের দুর্বল অংশ, যেমন “রিযিকের বন্দোবস্ত” ইত্যাদি, নবীর (সাঃ) নামে চালিয়ে দেওয়া উচিত নয়।
  • শুধুমাত্র সূরা ওয়াকিয়াহ-এর উপর নির্ভরশীল না হওয়া: রিযিক, দায়িত্ব ইত্যাদি বিষয়ে আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখা এবং নিজের কর্তব্য পালন করা জরুরি।

উপসংহার

সূরা ওয়াক্বিয়াহ একটি অমূল্য সূরা যা আমাদেরকে কিয়ামতের ভয়াবহতা ও আল্লাহর রহমতের বার্তা প্রদান করে। নিয়মিত তিলাওয়াতের মাধ্যমে আমরা এর অপরিসীম ফজিলত অর্জন করতে পারি এবং জীবনে সফলতা ও পরকালে মুক্তি লাভ করতে পারি। এই সূরা তিলাওয়াতের পাশাপাশি আমাদের উচিত এর শিক্ষা গ্রহণ করা এবং আমাদের জীবনকে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী পরিচালিত করা। আমাদের এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে আমাদের সাথেই থাকবেন। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site is protected by reCAPTCHA and the Google Privacy Policy and Terms of Service apply.

Related Posts

Disclaimer: All trademarks, logos, images, and brands are property of their respective owners. If you have any opinion or request or you find any bug/issues, please Contact Us