ফরজ গোসল এই গোসলকে বলা হয় যা করা অপরিহার্য। বালেগ বয়সে নাপাক হলে অর্থাৎ কারো স্বপ্নদোষ হলে স্বামী স্ত্রী মিলনে গোসল ফরজ হয়। আর তা থেকে পবিত্রতা অর্জনের তাগিদ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন→ যদি তোমরা নাপাক হয়ে থাকো, তবে গোসল করো।( সূরা মায়েদাহ আয়াত ৬)
অনেকেই ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম জানেন না, আবার সংকোচে কাউকে জিজ্ঞেসও করতে পারেন না। ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম না জানার কারণে অসংখ্য মুসলিমদের নানা আমল কবুল হয় না। অথচ নামাজের জন্য পবিত্র অর্জন করা ফরজ। আল্লাহ তা’আলা বলেন→ “হে ঈমানদার গণ! তোমরা নামাজের ধারে কাছেও যেয়ো না যখন তোমরা নেশা অবস্থায় মাতাল হয়ে থাকো, যে পর্যন্ত না তোমরা বোঝ যে তোমরা কি বলছো, অথবা যৌন সম্ভোগ করার পরবর্তী অবস্থায়, যতক্ষণ না গোসল করেছ (সূরা আন’নিসা আয়াত ৪৩)
গোসল ফরজ হওয়ার কারণ
ইসলামে মোট ১০টি কারণে ফরজ গোসল করা হয়। সেগুলো হলো:
১. বীর্যপাত হলে
২. স্বপ্নে বীর্যপাত হলে
৩. নারীর হায়েজ বা নেফাস শেষ হলে
৪. ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে
৫. মুসলমান হয়ে অন্য ধর্মে চলে গেলে আবার ইসলামে ফিরে আসলে
৬. কাফের হয়ে ইসলামে ফিরে আসলে
৭. মুসলমান হয়ে কাফের হয়ে গেলে আবার মুসলমান হলে
৮. জানাযায় উপস্থিত হলে
৯. কাফের হয়ে মুসলমান হয়ে কাফের হয়ে গেলে আবার মুসলমান হলে
১০. মৃতদেহকে গোসল দেওয়ার জন্য ।
গোসলের ফরজ তিনটি
১.একবার গড়গড়া সহিত কুলি করা ফরজ।
২. একবার নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছিয়ে পরিষ্কার করা ফরজ ।
৩ সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছানো ফরজ ।
ফরয গোসলের নিয়ম:
১. সর্বপ্রথম দুহাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা।
২. শরীর ও কাপড়ের যেখানে নাপাক লেগেছে সেই নাপাকি দূর করা।
৩. কাঁচা (মাটির) গোসলখানা হলে ফ্লোরের মাটিতে অথবা কাঁচা দেয়ালে হাত ঘষে অথবা সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেয়া। পাকা গোসলখানা হলে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেয়া।
৪. নামাযের জন্য যেভাবে ওযু করা হয় সেভাবে অজু করা।
অবশ্য অযুর মধ্যে কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া সুন্নত হলেও ফরয গোসলের পূর্বে যে ওযুর করা হয়, সেই ওযুতে কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া ফরয।
অতএব কুলি ও নাকে পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে একটু বেশি গুরুত্ব দেয়া। অর্থাৎ গরগরার সহিত কুলি করা। নাকে পানি দেয়া ও নাক ঝাড়া।
৫. গোসলখানার ফ্লোরে ব্যবহৃত পানি জমা হলে ওযুর শেষে পা ধোয়ার প্রয়োজন নেই। গোসল শেষে এই স্থান ত্যাগ করে পা ধুয়ে নিবে।
আর যদি ফ্লোরে পানি না জমে, তাহলে ওযুর সঙ্গে পা ধুয়ে নিতে পারবে।
৬. ওযুর শেষে তিন কোষ পানি মাথায়, তিন কোষ পানি ডান কাঁধে, তিন কোষ পানি বাম কাঁধে দিয়ে, পুরো শরীর ধৌত করবে।
ফরজ গোসলের হাদিস
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন জানাবাত হওয়ার কারণে গোসল করতেন, তখন প্রথমে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নিতেন। তারপর কুলি করতেন এবং নাকে পানি দিতেন। তারপর মাথায় পানি ঢেলে মাথা মাসেহ করতেন। তারপর ডান কাঁধের উপর তিন কোষ পানি ঢেলে ডান কাঁধ মাসেহ করতেন। তারপর বাম কাঁধের উপর তিন কোষ পানি ঢেলে বাম কাঁধ মাসেহ করতেন। তারপর সারা শরীরে পানি ঢেলে গোসল সম্পন্ন করতেন। (বুখারি ও মুসলিম)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ফরজ গোসল করে, তার সমস্ত পাপ গোসল করার পানিতে ধুয়ে যায়, এমনকি যদি সে হত্যাকারী হয়। (তিরমিজি)
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি নামাজের জন্য ওযু করে, তারপর ফরজ গোসল করে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খোলা হয়, সে যেকোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারে। (তিরমিজি)
উপসংহার
আমরা অনেকেই জানিনা কখন গোসল ফরজ হয় আবার জানলেও আমরা নিয়ম জানি না কিভাবে ফরজ গোসল করতে হয়। আজকে এই আর্টিকেলে জানানোর চেষ্টা করেছি যে কিভাবে ফরজ গোসল করতে হয় । আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করবেন ।