পবিত্র কোরআনের দ্বিতীয় এবং সব থেকে বড় সূরা আল-বাকারার 255 নং আয়াতকে আয়াতুল কুরসি বলা হয়। এটি কোরআনের সবথেকে প্রসিদ্ধ আয়াত। বিভিন্ন আলেমগণ একে সর্বশেষ আয়াত হিসেবে মান্য করেন। মহাবিশ্বের ওপর আল্লাহর এক জোড়া ক্ষমতার ঘোষণা করা হয়েছে আয়াতুল কুরসি। আয়াতুল কুরসি দুষ্টু জিন ও শয়তানকে দূর করার সবথেকে শক্তিশালী আয়াত। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো অন্তরায় থাকে না। (শুআবুল ঈমান : ২৩৯৫)
আয়াতুল কুরসি আরবী উচ্চারণ
اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ، لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ، لَهُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَيْئٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ، وَلاَ يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَ هُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ-
বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম। লা তা’খুযুহু সিনাতুঁ ওয়ালা নাঊম। লাহূ মা ফিস্ সামাওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্বি। মান যাল্লাযী ইয়াশফাউ’ ই’ন্দাহূ ইল্লা বিইজনিহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খলফাহুম, ওয়ালা ইউহিতূনা বিশাইয়্যিম্ মিন ‘ইলমিহি ইল্লা বিমা শা-আ’ ওয়াসিআ’ কুরসিইয়্যুহুস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বি, ওয়ালা ইয়াউ’দুহূ হিফযুহুমা ওয়া হুওয়াল আলিইয়্যুল আজীম। (সুরা বাকারা: ২৫৫)
আয়াতুল কুরসি বাংলা অর্থ
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন প্রকৃত উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে সব কিছুই তাঁর। কে আছে এমন যে, তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? দৃষ্টির সামনে ও পিছনে যা কিছু রয়েছে সবই তিনি জানেন। মানুষ ও সমস্ত সৃষ্টির জ্ঞান আল্লাহ্র জ্ঞানের কোন একটি অংশবিশেষকেও পরিবেষ্টন করতে পারে না। কিন্তু আল্লাহ যাকে যতটুকু ইচ্ছা দান করেন তিনি ততটুকু পান। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীন পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলো ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয় । তিনিই সর্বোচ্চ ও সর্বাপেক্ষা মহান’ (বাক্বারাহ ২৫৫)।
আয়াতুল কুরসির আমল ও ফযীলত
উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ্র একক অস্তিত্ব, তাওহীদ ও গুণাবলীর বর্ণনা এক অত্যাশ্চর্য ও অনুপম ভঙ্গিতে করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এটিকে সবচেয়ে উত্তম আয়াত বলে উল্লেখ করেছেন। নাসাঈ শরীফের এক বর্ণনা রয়েছে যে, নবী করীম (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেহ ফরয ছালাতের পর আয়াতুল কুরসী নিয়মিত পাঠ করে, তার জন্য বেহেশতে প্রবেশের পথে একমাত্র মৃত্যু ছাড়া অন্য কিছু বাধা দিতে পারে না। শয়নকালে পাঠ করলে সারা রাত্রীতে একজন ফেরেশতা তাকে পাহারা দিবে যাতে শয়তান তার ক্ষতি করতে না পারে।
- প্রতিদিন ফজরের নামাযের পর এবং রাতে এশার নামাজের পর শোয়ার সময় যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, মহান আল্লাহ পাক উক্ত পাঠকারীর স্বয়ং রক্ষণাবেক্ষণকারী হবেন।
- জ্বিন-পরী, দেও-দানবের অনিষ্ট হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
- সকল প্রকার বিপদ-আপদ ও দুঃখ-কষ্ট দূর হয়।
- মনের সকল প্রকার নেক বাসনা পূর্ণ হয় এবং রুজী-রোজগারে উন্নতি হয়।
- প্রতি ওয়াক্ত নামজের পর বিশেষ করে ফরয নামাযের পর একবার করে পাঠ করলে অত্যন্ত আরামের সাথে রুহ কবজ করা হয়।
- ঘর হতে বের হবার সময় অথবা বিদেশে রওয়ানা হবার সময় এ আয়াতসমূহ পাঠ করলে সকল প্রকার বিপদ হতে নিরাপদে থাকা যায় এবং যাবতীয় উদ্দেশ্য সফল হয়।
আয়াতুল কুরসি নিয়ে কিছু সহিহ হাদিস
(১)
“হযরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রতি ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা হবে না।” (তিরমিযী, হাদিস : ২৮২২)”
(২)
“হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঘুমানোর সময় আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার বিছানার নিচে থেকে একজন ফেরেশতা তাকে পাহারা দেবে এবং সকালে শয়তান তার কাছে আসতে পারবে না।” (বুখারী, হাদিস : ২৩১১)”
(৩)
“হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আয়াতুল কুরসি আল্লাহর ৯৯ নামের সমতুল্য।” (তিরমিযী, হাদিস : ২৮২৪)”
উপসংহার
আমাদের এই আর্টিকেলটি করে খুব সহজে আয়াতুল কুরসি মুখস্ত করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ এবং আয়াতুল কুরসির গুরুত্ব এবং ফজিলত সম্পর্কে জানতে পেরেছেন আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করবেন।