বাংলাদেশের মানচিত্র হলো দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত একটি স্বাধীন দেশের ভৌগোলিক রূপরেখা। 1971 সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে, এই মানচিত্রটি জাতীয় পরিচয় এবং ঐক্যের প্রতীক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এই মানচিত্রে ৮ টি বিভাগ, ৬৪ টি জেলা, এবং ৪৯৫ টি উপজেলা রয়েছে। এছাড়াও, পাহাড়, নদী, সমুদ্র, এবং বনভূমি সহ বিভিন্ন ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা আছে। বাংলাদেশের মানচিত্র কেবল একটি ভৌগোলিক চিত্র নয়, বরং এটি দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং ঐতিহ্যেরও প্রতীক।
বাংলাদেশের মানচিত্র
বাংলাদেশের আয়তন
বাংলাদেশ, দক্ষিণ এশিয়ার একটি মনোরম দেশ, ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তন নিয়ে বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম দেশ। এই আয়তনের মধ্যে ১,৩৪,২০০ বর্গ কিলোমিটার স্থলভাগ এবং ১৩,৩৭০ বর্গ কিলোমিটার জলভাগ অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের আয়তন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীতে পলি পড়ার ফলে নতুন ভূমি তৈরি হচ্ছে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে কিছু দ্বীপের আয়তনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বৈচিত্র্যপূর্ণ ভূখণ্ডে উঁচু পাহাড়, বিস্তৃত সমভূমি, গভীর নদী, এবং মনোরম সমুদ্রতীরবর্তী এলাকা রয়েছে।
এই আয়তনের মধ্যে প্রায় ১৭ কোটি মানুষ বসবাস করে, যারা বিভিন্ন সংস্কৃতি, ধর্ম, এবং ভাষা ঐতিহ্য বহন করে।বাংলাদেশের আয়তন কেবল একটি ভৌগোলিক পরিমাপ নয়, বরং এটি দেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস, সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সম্পদ, এবং মানুষের ঐক্যের প্রতীক। এই আয়তন দেশের অর্থনীতি, কৃষি, পরিবেশ, এবং সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাংলাদেশের ৬৪ জেলা
বিভাগ | জেলা | প্রতিষ্ঠিত | জনসংখ্যা (হাজার) | আয়তন (বর্গকিমি) |
---|---|---|---|---|
ঢাকা | ঢাকা জেলা | ১৭৭২ | ১৪,৭৩৪ | ১৪৬৪ |
ফরিদপুর জেলা | ১৮১৫ | ২১৬৩ | ২০৭৩ | |
গাজীপুর জেলা | ১৯৮৪ | ৫২৬৩ | ১৮০০ | |
গোপালগঞ্জ জেলা | ১৯৮৪ | ১২৯৫ | ১৪৯০ | |
কিশোরগঞ্জ জেলা | ১৯৮৪ | ৩২৬৭ | ২৬৮৯ | |
মাদারীপুর জেলা | ১৯৮৪ | ১২৯৩ | ১১৪৫ | |
মানিকগঞ্জ জেলা | ১৯৮৪ | ১৫৫৮ | ১৩৭৯ | |
মুন্সীগঞ্জ জেলা | ১৯৮৪ | ১৬২৫ | ৯৫৫ | |
নারায়ণগঞ্জ জেলা | ১৯৮৪ | ৩৯০৯ | ৭০০ | |
নরসিংদী জেলা | ১৯৮৪ | ২৫৮৪ | ১১৪১ | |
রাজবাড়ী জেলা | ১৯৮৪ | ১০৯০ | ১১১৯ | |
শরীয়তপুর জেলা | ১৯৮৪ | ১২৯৫ | ১১৮২ | |
টাঙ্গাইল জেলা | ১৯৬৯ | ৪০৩৮ | ৩৪১৪ | |
চট্টগ্রাম | বান্দরবান জেলা | ১৯৮১ | ৪৮১ | ৪৪৭৯ |
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা | ১৯৮৪ | ৩৩০৭ | ১৯২৭ | |
চাঁদপুর জেলা | ১৯৮৪ | ২৬৩৬ | ১৭০৪ | |
চট্টগ্রাম জেলা | ১৬৬৬ | ৯১৬৯ | ৫২৮৩ | |
কুমিল্লা জেলা | ১৮৯০ | ৬২১২ | ৩০৮৫ | |
কক্সবাজার জেলা | ১৯৮৪ | ২৮২৩ | ২৪৯২ | |
ফেনী জেলা | ১৯৮৪ | ১৬৪৮ | ৯২৮ | |
খাগড়াছড়ি জেলা | ১৯৮৩ | ৭১৪ | ২৭০০ | |
লক্ষ্মীপুর জেলা | ১৯৮৪ | ১৯৩৮ | ১৪৫৬ | |
নোয়াখালী জেলা | ১৮২১ | ৩৬২৫ | ৪২০২ | |
রাঙ্গামাটি জেলা | ১৯৮৩ | ৬৪৮ | ৬১১৬ | |
খুলনা | বাগেরহাট জেলা | ১৯৮৪ | ১৬১৩ | ৩৯৫৯ |
চুয়াডাঙ্গা জেলা | ১৯৮৪ | ১২৩৬ | ১১৭৭ | |
যশোর জেলা | ১৭৮১ | ৩০৭৭ | ২৫৬৭ | |
ঝিনাইদহ জেলা | ১৯৮৪ | ২০০৬ | ১৯৬১ | |
খুলনা জেলা | ১৮৮২ | ২৬১৩ | ৪৩৯৪ | |
কুষ্টিয়া জেলা | ১৯৪৭ | ২১৫০ | ১৬০৮ | |
মাগুরা জেলা | ১৯৮৪ | ১০৩৩ | ১০৪৯ | |
মেহেরপুর জেলা | ১৯৮৪ | ৭০৫ | ৭১৬ | |
নড়াইল জেলা | ১৯৮৪ | ৭৮৯ | ৯৯০ | |
সাতক্ষীরা জেলা | ১৯৮৪ | ২১৯৭ | ৩৮৫৮ | |
রাজশাহী | বগুড়া জেলা | ১৮২১ | ৩৭৩৪ | ২৯২০ |
জয়পুরহাট জেলা | ১৯৮৪ | ৯৫৬ | ৯৬৫ | |
নওগাঁ জেলা | ১৯৮৪ | ২৭৮৫ | ৩৪৩৬ | |
নাটোর জেলা | ১৯৮৪ | ১৮৬০ | ১৮৯৬ | |
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা | ১৯৮৪ | ১৮৩৬ | ১৭০৩ | |
পাবনা জেলা | ১৮৩২ | ২৯১০ | ১৩৭২ | |
রাজশাহী জেলা | ১৭৭২ | ২৯১৫ | ২৪০৭ | |
সিরাজগঞ্জ জেলা | ১৯৮৪ | ৩৩৫৮ | ২৪৯৮ | |
সিলেট | হবিগঞ্জ জেলা | ১৯৮৪ | ২৩৫৯ | ২৬৩৭ |
মৌলভীবাজার জেলা | ১৯৮৪ | ২১২৩ | ২৭৯৯ | |
সুনামগঞ্জ জেলা | ১৯৮৪ | ২৬৯৫ | ৩৬৭০ | |
সিলেট জেলা | ১৭৭২ | ৩৮৫৭ | ৩৪৯০ | |
বরিশাল | বরগুনা জেলা | ১৯৮৪ | ১০১০ | ১৮৩১ |
বরিশাল জেলা | ১৭৯৭ | ২৫৭০ | ২৭৮৫ | |
ভোলা জেলা | ১৯৮৪ | ১৯৩৩ | ৩৪০৩ | |
ঝালকাঠি জেলা | ১৯৮৪ | ৬৬১ | ৭৪৯ | |
পটুয়াখালী জেলা | ১৯৬৯ | ১৭২৭ | ৩২২১ | |
পিরোজপুর জেলা | ১৯৮৪ | ১১৯৮ | ১৩০৮ | |
ময়মনসিংহ | জামালপুর জেলা | ১৯৭৮ | ২৫০০ | ২০৩২ |
ময়মনসিংহ জেলা | ১৭৮৭ | ৫৯০০ | ৪৩৬৩ | |
নেত্রকোণা জেলা | ১৯৮৪ | ২৩২৫ | ২৮১০ | |
শেরপুর জেলা | ১৯৮৪ | ১৫০২ | ১৩৬৪ | |
রংপুর | দিনাজপুর জেলা | ১৭৮৬ | ৩৩১৫ | ৩৪৩৮ |
গাইবান্ধা জেলা | ১৯৮৪ | ২৫৬২ | ২১৭৯ | |
কুড়িগ্রাম জেলা | ১৯৮৪ | ২৩২৯ | ২২৯৬ | |
লালমনিরহাট জেলা | ১৯৮৪ | ১৪২৮ | ১২৪১ | |
নীলফামারী জেলা | ১৯৮৪ | ২০৯৩ | ১৫৮০ | |
পঞ্চগড় জেলা | ১৯৮৪ | ১১৮০ | ১৪০৫ | |
রংপুর জেলা | ১৭৬৯ | ৩১৭০ | ২৪০৮ | |
ঠাকুরগাঁও জেলা | ১৯৮৪ | ১৫৩৪ | ১৮১০ |
বাংলাদেশের নদ-নদী
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। প্রায় 310 টি নদী-নদী শাখা-প্রশাখাসহ বিপুল জলরাশি নিয়ে 24,140 কিলোমিটার জায়গা দখল করে দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
এই নদীগুলি কেবল জলপ্রবাহ নয়, বরং জীবন্ত জীববৈচিত্র্যের আধার, জীবিকার উৎস, এবং বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
প্রধান নদীসমূহ
- পদ্মা: গঙ্গা ও যমুনার মিলিত প্রবাহ, বাংলাদেশের বৃহত্তম নদী।
- যমুনা: ব্রহ্মপুত্রের প্রধান শাখা, বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী।
- মেঘনা: কুশিয়ারা, কর্ণফুলী, এবং গোমতীর মিলিত প্রবাহ, বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম নদী।
- ব্রহ্মপুত্র: হিমালয় থেকে উৎপন্ন, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে প্রবাহিত।
- কর্ণফুলী: চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত, বাংলাদেশের প্রধান পাহাড়ি নদী।
বাংলাদেশের পাহাড়-পর্বত
বাংলাদেশ, সমতল ভূমির দেশ হলেও, এর উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত মনোরম পাহাড়-পর্বতমালা দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে করে তুলেছে অপরূপ।
প্রধান পর্বতমালা
- পূর্ব পার্বত্যমাল: খাছিয়া, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, বম, মনিপুরী, চাকমা, ও রাখাইন পাহাড়
- উত্তর পার্বত্যমাল: গারো পাহাড়
উল্লেখযোগ্য পর্বত
- কেওক্রাডং: বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত (1,230 মিটার)
- মৌডুই: চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ পর্বত (1,018 মিটার)
- নিলাচল: বান্দরবানের বিখ্যাত পর্বত (614 মিটার)
বাংলাদেশের চর ও দ্বীপ
বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে অসংখ্য চর ও দ্বীপের অপূর্ব সমাহার রয়েছে। নীল জলের বুকে ভেসে থাকা এই প্রাকৃতিক অলঙ্কার দেশের সৌন্দর্যকে করে তুলেছে অপরূপ।
প্রধান চর ও দ্বীপ
- চর: নদীর মধ্যে পলি পড়ে তৈরি জমির ভূখণ্ড।
- দ্বীপ: সমুদ্রের মধ্যে জমির ভূখণ্ড।
উল্লেখযোগ্য চর ও দ্বীপ
- চর পদ্মা: বাংলাদেশের বৃহত্তম চর।
- সেন্ট মার্টিন: বাংলাদেশের দক্ষিণতম বিন্দু।
- মহেশখালী: বাংলাদেশের দীর্ঘতম দ্বীপ।
- বড় মোঘলা: বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দ্বীপ।
উপসংহার
বাংলাদেশের মানচিত্র কেবল একটি ভৌগোলিক চিত্র নয়, বরং এটি জাতীয় পরিচয়, ঐতিহ্য, ঐক্য, এবং সমৃদ্ধির প্রতীক। এই মানচিত্র আমাদের দেশের সীমানা নির্ধারণ করে, প্রাকৃতিক সম্পদের বৈচিত্র্য তুলে ধরে, এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলি চিহ্নিত করে। এছাড়াও, মানচিত্র আমাদের জাতীয় পরিকল্পনা, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সকলের জন্য শিক্ষা ও জ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবেও মানচিত্র কাজ করে। সুতরাং, বাংলাদেশের মানচিত্র আমাদের জাতীয় সম্পদের একটি অমূল্য অংশ যা আমাদের ঐক্য ও অগ্রগতিকে চিহ্নিত করে। এই মানচিত্রের যথাযথ মূল্যবোধ বুঝতে এবং এর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে আমাদের সকলের কর্তব্য।