সংযুক্ত আরব আমিরাতের মহাকাশ গবেষণা ও জ্যোতির্বিদ্যাবিষয়ক সংস্থা আমিরাতস এস্ট্রোনোমি সোসাইটি ২০২৪ সালের পবিত্র রমজান মাস ও পবিত্র ঈদুল ফিতরের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করেছে। অনেকেই আছেন যারা গুগলে গিয়ে সার্চ করেন ২০২৪ সালের রোজার ঈদ কত তারিখে হবে? অথবা ২০২৪ সালের রমজানের ঈদ কবে হবে? ঈদ উল ফিতর কবে হবে ২০২৪ ইত্যাদি। এই আর্টিকেল তাদের জন্যে খুবই উপকারী একটি আর্টিকেল হতে চলেছে। নিচে এই সমস্ত বিষয়ে আলোচনা করা হবে। অবশ্যই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
তারিখ নির্ধারনে ঈদের পেছনের গল্প
বাংলাদেশের মুসলমানরা সবচেয়ে বড় উৎসব হিসেবে বিবেচনা করেন ঈদ-উল ফিতরকে এবং এক কথায় সবার কাছে পরিচিত রোজা ঈদ হিসেবে। পৃথিবীতে সর্বমোট ধর্ম রয়েছে ৪,৩০০ টি। তার মধ্যে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা ৭৭১.৫০ কোটি (প্রায়) যা বিশ্বজনসংখ্যা রিপোর্ট ২০১৯ এর মতে। এর মধ্যে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ২০০ কোটি। আর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে ঈদ। মুসলমানদের প্রতি বছরে দুইটি ঈদ রয়েছে। এর একটি ঈদ-উল ফিতর (রোজা ঈদ) আর অপরটি হচ্ছে ঈদ-উল আযাহা ( কোরবানি ঈদ)। এই সময় মুসলমানরা রোজা রাখে, দীনের পথে চলে, নামাজ কায়েম করে, সেহেরি ও ইফতার করা ইত্যাদির মাধ্যমে মুসলমানরা এই সময়টাকে অতিবাহিত করে থাকেন। ঈদ মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হলেও এই ধর্মের আবির্ভাবের সাথে সাথেই কিন্তু ঈদের প্রচলন শুরু হয় নাই।
ঈদুল ফিতর ২০২৪ এর সম্ভাব্য তারিখ
২০২৪ সালের ক্যালেন্ডারের সরকারি ছুটির তালিকা অনুযায়ী ১০ এপ্রিল কিংবা ১১ এপ্রিল রোজার ঈদ বা ঈদুল ফিতর হতে পারে। যেহেতু রোজার ঈদ বা ঈদুল ফিতর চাঁদ দেখার ওপার নির্ভরশীল সেহেতু ৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা গেলে ১০ এপ্রিল ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হবে।
ঈদুল ফিতর নিয়ে কিছু কথা
ঈদুল ফিতর ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দুটো সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের একটি। দ্বিতীয়টি হলো ঈদুল আযহা।
ঈদুল ফিতরের অর্থ হলো “রোজা ভাঙার আনন্দ”। রমজান মাসের ২৯ বা ৩০ দিন রোজা রাখার পর শাওয়াল মাসের ১ তারিখে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। এই দিনটি মুসলমানদের জন্য একটি আনন্দের দিন। এদিন তারা তাদের দীর্ঘ রোজা পালনের পুরস্কার লাভ করে।
ঈদুল ফিতর উদযাপনের জন্য মুসলমানরা কিছু নির্দিষ্ট রীতিনীতি পালন করে থাকে। যেমন:
- ঈদের দিন সকালে গোসল করা।
- সুগন্ধি মেখে নতুন কাপড় পরা।
- ঈদের জামাত আদায় করা।
- ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা।
- গরিব-দুঃখীদের জন্য ফিতরা প্রদান করা।
- মিষ্টি খাওয়া।
ঈদের দিন মুসলমানরা একে অপরের সাথে কোলাকুলি করে এবং ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে। তারা গরিব-দুঃখীদের জন্য ফিতরা প্রদান করে। ফিতরা হলো রমজান মাসের রোজা রাখার জন্য প্রদেয় একটি সামাজিক দান। ঈদের দিন মুসলমানরা মিষ্টি খাবার খেয়ে আনন্দ উদযাপন করে।
ঈদুল ফিতর মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সংহতির বন্ধন দৃঢ় করে। এটি মুসলমানদেরকে তাদের ধর্মীয় কর্তব্যপালনের প্রতি উৎসাহিত করে।
Eid-al-fitr 2024 Possibility Date with Day Name
তারিখ | বার | ঈদের নাম |
---|---|---|
১০ এপ্রিল ২০২৪ | বুধবার | ঈদুল ফিতর |
১১ এপ্রিল ২০২৪ | বৃহস্পতিবার | ঈদুল ফিতর |
ঈদ সম্পর্কে হাদিস
عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَدِمَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم الْمَدِينَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا فَقَالَ مَا هَذَانِ الْيَوْمَانِ قَالُوا كُنَّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِى الْجَاهِلِيَّةِ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّ اللهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا يَوْمَ الأَضْحَى وَيَوْمَ الْفِطْرِ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মদীনায় আগমন করলে দেখলেন, মদীনাবাসীরা দুটি ঈদ পালন করছে। তা দেখে তিনি বললেন, (জাহেলিয়াতে) তোমাদের দুটি দিন ছিল যাতে তোমরা খেলাধূলা করতে। এক্ষণে ঐ দিনের পরিবর্তে আল্লাহ তোমাদেরকে দুটি উত্তম দিন প্রদান করেছেন; ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার দিন।’ (আবূ দাঊদ ১১৩৬, নাসাঈ ১৫৫৬)
১৪৪৫ হিজরি সনের রমজান মাসের ক্যালেন্ডার এর ছবি
ইসলাম ধর্মে কখন ঈদ চালু হয়
৬২৩ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। হিজরত করার পর তিনি প্রথম রমজান মাসের রোজা রাখেন এবং ঈদুল ফিতর উদযাপন করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মোঃ আতাউর রহমান মিয়াজির বক্তব্যও সঠিক। তিনি বলেন, হিজরী দ্বিতীয় সনে ঈদের প্রবর্তন করা হয়েছিল। কারণ, হিজরী প্রথম সনে রমজান মাসের রোজা রাখা হয়েছিল, কিন্তু ঈদের প্রবর্তন করা হয়নি।
সুতরাং, ৬২৩ খ্রিস্টাব্দে বা হিজরী দ্বিতীয় সনে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছিল বলে বিবেচনা করা হয়।
প্রথম যুগে ঈদুল ফিতর পালনের রীতিনীতি
ঈদ আরবি শব্দ। এর মানে আনন্দ, খুশি, উৎসব ইত্যাদি। মুসলমানদের জন্য ঈদ পালন করা ওয়াজিব। ঈদ পালনের কিছু নিয়ম ইসলামে নিদিষ্ট করা আছে।
- এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে ঈদের দিন সকালে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা, যা সব মুসলমানের জন্য অবশ্য পালনীয়।
- এছাড়া ঈদ-উল ফিতরে ফিতরা প্রদান করাও একটি রীতি। ফিতরা ঈদের নামাজের আগে অসহায় গরিব-দুঃখীদের দিতে হয়।
- নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ ঈদের দিনে গোসল করে উত্তম পোশাক পরে নামাজ পড়তে যেতেন। তাই ঈদের দিন গোসল ও উত্তম পোশাক পরিধান করতে হবে।
- এছাড়া ঈদের নামাজের পর মিষ্টি দ্রব্য খাওয়া এবং আত্মীয় পরিজন, প্রতিবেশী বন্ধুদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ের রেওয়াজ করা।
উপসংহার
আশা করি আর্টিকেলটি থেকে আপনারা ঈদুল ফিতরের তারিখ এবং দিন সম্বন্ধে ধারণা লাভ করতে পেরেছেন। আমাদের আর্টিকেলটি যদি আপনার পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।